Migrant workers

কাজ ‘অনেক কম’, ভিন্‌ রাজ্যে ফেরার তোড়জোড়

পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রাম-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে শ্রমিকেরা মাথা পিছু পাঁচ-ছ’হাজার টাকা দিয়ে বাস ভাড়া করে নিজেদের উদ্যোগে মহারাষ্ট্র, কেরালায় ফিরতে দেখা যাচ্ছে। তাঁদের দাবি, ব্লকে হাতে গোনা কয়েকদিন কাজ মিলেছে।

Advertisement

সুদিন মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২০ ০০:৫৭
Share:

বাস ভাড়া করে ফেরা। নিজস্ব চিত্র

লকডাউন, করোনা-পরিস্থিতিতে কাজ হারিয়ে ভিন্‌ রাজ্য থেকে দলে দলে ফিরে এসেছিলেন শ্রমিকেরা। না খেয়ে, মাইলের পরে মাইল হেঁটে ফেরা শ্রমিকদের জন্য পরে কিছু কাজের বন্দোবস্ত করে রাজ্য সরকার। কিন্তু ধাপে ধাপে প্রায় সব কিছু খোলার ইঙ্গিত মিলতেই ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।

Advertisement

পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের কুসুমগ্রাম-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে শ্রমিকেরা মাথা পিছু পাঁচ-ছ’হাজার টাকা দিয়ে বাস ভাড়া করে নিজেদের উদ্যোগে মহারাষ্ট্র, কেরালায় ফিরতে দেখা যাচ্ছে। তাঁদের দাবি, ব্লকে হাতে গোনা কয়েকদিন কাজ মিলেছে। তাতে যা আয় হয়েছে, সংসার চালানোর পক্ষে যথেষ্ট নয়। তাই কেউ মালিক, কেউ ভিন্‌ রাজ্যের ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আবার ভাগ্যান্বেষণে যেতে চাইছেন।

তিন বছর ধরে কেরালায় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন মন্তেশ্বর গ্রামের সুজয় সাঁতরা। লকডাউনে প্রায় সাড়ে আট হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। সুজয় জানান, কেরালায় রাজমিস্ত্রির মজুরি ন’শো থেকে হাজার টাকা। আর জোগাড়েরা পান ছ’শো থেকে সাতশো টাকা। মাসে প্রায় ২৫ -২৬ দিন কাজ মেলে। ঘর ভাড়া ও এক বেলার খাবার ঠিকাদারের দায়িত্বে থাকে। ফলে, এক জন শ্রমিক প্রায় দশ হাজার টাকা বাড়িতে পাঠাতে পারেন। কিন্তু এখানে গত চার-পাঁচ মাসে একশো দিনের কাজ মিলেছে চার দিন। ফলে, আবারও কেরল ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, দাবি সুজয়ের।

Advertisement

মন্তেশ্বর গ্রামের বাসুদেব পণ্ডিত, পরিমল রায়, শঙ্কর দাস, কুসুমগ্রামের আলম শেখরাও জানান, মহারাষ্ট্রের থানে এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন তাঁরা। পাঁচ মাস আগে প্রায় সাত হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু গত কয়েকমাসে কয়েকদিন একশো দিনের কাজ ছাড়া, সে ভাবে কোনও কাজই জোটেনি তাঁদের। তাঁদের দাবি, বাইরে কাজ করে যেখানে প্রতি মাসে ন্যূনতম দশ থেকে বারো হাজার টাকা রোজগার হয়, সেখানে বিগত কয়েক মাসে সব মিলিয়ে পাঁচ হাজার টাকাও রোজগার হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতেও মুশকিল হচ্ছে। স্বভাবতই, ভিন্‌ রাজ্যের ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফের কাজে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। অনেকে টাকা ধার করেও গাড়ি ভাড়ার জোগাড় করছেন।

আবার পরিবারের দুর্দশা থেকে পরিজনেরাও অনেক সময়ে ভিন্‌ রাজ্যে স্বামী বা ছেলেকে কাজে পাঠাতে চাইছেন, এমনও পরিস্থিতি হয়েছে। মন্তেশ্বরের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা ছবি হাজরা, কালাচাঁদ দাসদের দাবি, একশো দিনের কাজে সংসার চলছে না। তাই করোনা নিয়ে ভয় থাকলেও ছেলেদের বাস ভাড়া দিয়ে থানেতে রাজমিস্ত্রির কাজে পাঠিয়েছেন তাঁরা।

ব্লকের একশো দিনের প্রকল্পের এক আধিকারিক তথা যুগ্ম বিডিও সমীর কুমার হালদার জানান, প্রত্যেক পরিযায়ী শ্রমিকের জব-কার্ডের ব্যবস্থা হয়েছে। যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিক কাজের আবেদন করেছেন তাঁদের সকলকে কাজ দেওয়া হয়েছে। তবে কাজের পরিমাণ এলাকা অথবা সংসদ ভিত্তিক কমবে-শি রয়েছে মেনে নিয়েছেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘যে সমস্ত সংসদে কাজের যত বেশি প্রকল্প চালু করা গিয়েছে সেখানকার শ্রমিকেরা তত বেশি কাজ পেয়েছেন। যেখানে শ্রমিকেরা কাজ পাননি, সেখানে নতুন প্রকল্প চালুর উদ্যোগ করা হয়েছে।’’ বিডিও (মন্তেশ্বর) বিপ্লবকুমার দত্ত বলেন, ‘‘মন্তেশ্বরে রাজমিস্ত্রি ছাড়া, গয়না শিল্পী, জরির কাজ-সহ নানা পেশার দক্ষ শ্রমিক রয়েছেন। তাঁদের ভিন্‌ রাজ্যে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। অনেকের ভিন্‌ রাজ্যে কারখানাও রয়েছে। সে কারণে কিছু শ্রমিকের নিজেদের কর্মস্থলে যাওয়ার তাগিদ রয়েছে।’’

মন্তেশ্বরের বিজেপির মণ্ডল সভাপতি রাজেশ রায়ের কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল নেতৃত্ব মুখে পরিযায়ী শ্রমিকদের সাহায্য করার কথা বলছেন। আর শ্রমিকেরা ভিন্‌ রাজ্যে কাজ খুঁজতে যাচ্ছেন। বোঝাই যাচ্ছে, শাসক দল পুরোটাই ভাঁওতা দিচ্ছে।’’ তৃণমূল বিধায়ক (মন্তেশ্বর) সৈকত পাঁজার পাল্টা দাবি, ‘‘শ্রমিকদের সঙ্গে সরকার বহু প্রকল্প তৈরি করেছে। আর যারা অসহায় শ্রমিকদের কাছ থেকে রেলভাড়া নেয়, তাদের মুখে কারও নিন্দে শোভা পায় না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement