ফাইল চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনা ইতিবাচক, কিন্তু ভিন্-রাজ্যের মতো আয়ের সংস্থান এখানে হবে কি না— সেটাই ভাবাচ্ছে পূর্ব বর্ধমান জেলার পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশ। তাঁদের দাবি, ভিন্-রাজ্যে কাজে গিয়ে ন্যূনতম আট-দশ হাজার টাকা আয় হয়। কারও কারও তার থেকেও বেশি আয় হয়। তাঁত, মুরগির খামার বা ১০০ দিনের কাজ করে ওই টাকা আয় করা কার্যত এক প্রকার অসম্ভব। আবার পরিযায়ীদের অনেকে মুখ্যমন্ত্রীর কথায় আশা দেখতে পাচ্ছেন।
পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের দাবি, পরিযায়ীদের অনেকেই ফিরে যাননি। তাঁরা জেলাতেই কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন।
পরিযায়ীদের নিয়ে জেলায় যে পরিকল্পনা কমিটি গড়া হয়েছিল, তার অন্যতম কর্ত্রী তথা জেলা পরিষদের সভানেত্রী শম্পা ধাড়া বলেন, ‘‘একশো দিনের কাজ-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। ‘উৎকর্ষ বাংলা’-র মাধ্যমে প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। সে জন্য জেলায় কাজের প্রচুর সুযোগ তৈরি হয়েছে।’’
দিল্লিতে ফিরে যাওয়া গলসির আসিফ ইকবাল কিংবা খণ্ডঘোষের সুমন দালালেরা বলেন, “লকডাউনের সময়ে প্রায় এক বছর বাড়িতে ছিলাম। একশো দিনের কাজ ছাড়া, আর কিছু পাইনি। সংসার টানতে ফের দিল্লিতে চলে এসেছি। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়েই বলছি, বাস্তবে সংসার চালানোর মতো ন্যূনতম আয়ের সংস্থান করার জন্য কাজ পাওয়া খুব কঠিন।’’ একই সুর মুম্বইয়ে কয়েক বছর ধরে সুতোর কাজের কারিগর হিসেবে কর্মরত ভাতারের পরিযায়ী শ্রমিক শেখ হায়দারের। তিনি বলেন, “দশ-বারো বছর ধরে এই কাজ শিখেছি। মাস গেলে ১৮-২০ হাজার টাকা পর্যন্ত রোজগার হয়। এ ধরনের সুযোগ কি পশ্চিমবঙ্গ থেকে পাব? যদি পাই, তা হলে রাজ্যেই কাজ করব।’’
আবার কেরলে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন ভাতারের বলগোনার প্রহ্লাদ মাঝি, আউশগ্রামের হারু শেখেরা। তাঁদের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী ঠিকই বলেছেন, ভিন্-রাজ্যের কাজে প্রচুর ঝুঁকি। অহেতুক খরচও আছে। তবুও মাসের শেষে বাড়িতে কয়েক হাজার টাকা পাঠাতে পারি। যদি বাড়ির কাছে তার থেকে কমও হলেও স্থায়ী রোজগার হয়, তা হলে আর বাইরে যাব কেন?”
জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, করোনার প্রথম পর্বে লকডাউনের সময় জেলায় ফিরে আসা এমন নিবন্ধীকৃত পরিযায়ী শ্রমিক ২৬ হাজারের মতো। এর বাইরেও কয়েক হাজার পরিযায়ী রয়েছেন, যাঁরা আসেননি। সব মিলিয়ে জেলার পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার।
প্রশাসনের দাবি, ফিরে আসা পরিযায়ীদের জন্যে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মাধ্যমে কাজ, ঋণদান, তাঁত ও জরিশিল্পে কাজ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এ ছাড়া, দক্ষদের আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে শিল্পের শ্রমিক গড়ার জন্যেও ব্লক স্তরে নির্দেশ দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের কর্তারাই জানাচ্ছেন, ওই সব পরিকল্পনা বাস্তবে কতটা প্রতিফলিত হয়েছে, সে তথ্য অবশ্য জেলায় নেই।
তবে গত বছর দেড়েকে একশো দিনের প্রকল্পে ২৫,৫৮৬ জন পরিযায়ীকে কাজ দেওয়া হয়েছে। জব-কার্ড করা হয়েছে ১১,৮৭৫ জনের। তার পরেও অনেক পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্-রাজ্যে কাজে ফিরে গিয়েছেন। কেউ কেউ অবশ্য থেকেও গিয়েছেন।
গলসির জাকির হোসেন, বর্ধমানের বড়শুলের প্রিয়ব্রত আইচদের কথায়, “লকডাউনের সময়ে সেই যে ফিরে এসেছি, আর যাইনি। ওই সময়ের কষ্ট মনে করলে বাইরের রাজ্যে যেতে ইচ্ছে করে না। কোনও রকমে সংসার চলে যাচ্ছে। তবে স্থায়ী কর্মসংস্থান হলে ভাল হয়।’’ একই দাবি করেন বড়শুলের গায়ত্রী বিশ্বাস কিংবা আউশগ্রামের অভিরামপুরের তনু মেটেরাও।
ভাতারের সাহেবগঞ্জ ২ পঞ্চায়েতের ঘোলদা গ্রামের শেখ দোলনের কথায়, “অনিশ্চয়তার জন্যেই ভিন্-রাজ্যে পড়ে রয়েছি। সংসার-বাড়ি ছেড়ে কার আর বাইরে থাকতে ভাল লাগে?’’