—ফাইল চিত্র
‘সবার জন্য গৃহ’ প্রকল্পে দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায়ে বাড়ি তৈরির অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে জেলার অন্য পুরসভা। অথচ, পূর্ব বর্ধমানের মেমারি পুরসভা প্রথম পর্যায়ের কাজই শেষ করতে পারেনি বলে অভিযোগ। এর ফলে, প্রকল্পটি পিছিয়ে যাচ্ছে, দাবি করেছেন বিরোধীরা। ক্ষোভ দেখা দিয়েছে শাসক দলের অন্দরেও। মেমারি পুরসভার প্রশাসক স্বপন বিষয়ী অভিযোগের সারবত্তা মেনে বলেন, “ওই প্রকল্পে যাঁদের বাড়ি এখনও অসম্পূর্ণ হয়ে রয়েছে, তাঁদের বাড়ি পুরসভা উদ্যোগী হয়ে করে দিচ্ছে।’’
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর আগে ‘সবার জন্য গৃহ’ প্রকল্পে মেমারি শহরে ৩৩৮টি বাড়ি তৈরির অনুমোদন মিলেছিল। প্রতিটি বাড়ির জন্য উপভোক্তাদের তিন লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা পাওয়ার কথা। তিন কিস্তিতে ওই টাকা উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ঢুকে যাওয়ার কথা। বাড়ি তৈরি করবেন উপভোক্তা নিজেই। তবে বাড়ির নকশা থেকে নির্মাণ সামগ্রীর মান, সবটাই পুরসভার নজরদারিতে হবে। বিরোধীদের অভিযোগ, ‘নজরদারি’র নাম করে শাসকদলের নেতাদের ‘ঘনিষ্ঠ’রা উপভোক্তাদের কাছ থেকে বাড়ি তৈরির দায়িত্ব তুলে নিয়েছিলেন। বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার নাম করে টাকাও তুলেছেন বলে অভিযোগ। সে কারণেই যে বাড়ি ছয়-আট মাসে শেষ হওয়ার কথা, সেই বাড়ি তৈরি করতে তিন বছর কেটে গিয়েছে, অভিযোগ তাঁদের।
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, ওই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে বাড়ি তৈরির জন্য ১৬টি ওয়ার্ড থেকে প্রায় পাঁচশো জন উপভোক্তার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকা নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রথম পর্যায়ের বাড়ি তৈরির ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ বা ‘ইউসি’ জমা পড়েনি বলে ওই তালিকা অনুমোদন পায়নি। বিরোধীদের দাবি, প্রতি ওয়ার্ডেই অসম্পূর্ণ বাড়ি পড়ে রয়েছে। কোথাও রং হয়নি, কোথাও দরজা-জানলা বসেনি। বেশ কয়েকটি বাড়ির প্রথম ধাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। এমন কয়েকজন উপভোক্তার দাবি, “দু’টি কিস্তির টাকা পেয়ে বাড়ি তৈরির জন্য ঠিকাদারদের হাতে দেওয়া হয়েছিল। তাঁরাই কাজ ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। সে জন্য দেড়-দু’বছর ধরে বাড়ি তৈরি এগোয়নি। পুরসভা খোঁজ নিয়ে গিয়েছে।’’
মেমারি শহর তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার দাবি, “নতুন দায়িত্ব পেয়ে শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে ঘুরতে গিয়ে বাড়ি তৈরি নিয়ে ক্ষোভের আঁচ পাচ্ছি। পুরপ্রধানকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “কাটমানির জন্যই উপভোক্তার বাড়ি তৈরিতে শাসকদলের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারেরা জড়িয়েছেন। তার সঙ্গে রয়েছে পুরসভার প্রশাসনিক গাফিলতি। এই দুইয়ের মিলিত যোগফলে পুরসভার বাসিন্দারা প্রকল্পের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’’ যদিও পুরপ্রশাসকের দাবি, “উপভোক্তারা বাড়ি তৈরি করছেন বলেই দেরি হচ্ছে। যাঁদের বাড়ি এখনও বাকি, পুরসভার তত্ত্বাবধানে সেই বাড়িগুলি শেষ করা হচ্ছে। আমরা মডেল বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি।’’