—প্রতীকী চিত্র।
সম্প্রতি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর অপ্রয়োজনে অস্ত্রোপচারের (সি-সেকশন বা সিজ়ার) মাধ্যমে প্রসব কমাতে নির্দেশ দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সিজ়ার মা অথবা সন্তান, কারও স্বাস্থ্যের পক্ষেই অনেক সময় নিরাপদ নয়। তাই মোট শিশুর জন্মের ১০-১৫ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে সিজ়ার হওয়াটা কাম্য নয়। কিন্তু পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতরেরই পরিসংখ্যান বলছে চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল থেকে জুন) সরকারি হাসপাতালে যত প্রসব হয়েছে, তার ৩৭.৫৯ শতাংশই সিজ়ার। গত অর্থবর্ষের পুরোটিতে এই শতাংশ ছিল ৩০.২২। বেসরকারি হাসপাতালে তা ছিল ৭৭.২৩ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে চিন্তায় বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
জেলার গুরুত্বপূর্ণ সরকারি হাসপাতাল, আসানসোল জেলা হাসপাতাল এবং দুর্গাপুর মহকুমা হাসাপাতল। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে আসানসোল জেলা হাসপাতালে মোট প্রসবের ৪৫.১০ শতাংশ (১০,৩৫০টির মধ্যে ৪৬৬৮টি) এবং দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ৩৩.১৭ শতাংশ (৫,৭৩৬টির মধ্যে ১,৯০৩টি) সিজ়ার। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে এই শতাংশটি যথাক্রমে ৫৪.১৫ ও ৪০.৫৪। অর্থাৎ লাফিয়ে বাড়ছে সিজ়ার প্রসবের সংখ্যা। কেন এমনটা, তা নিয়ে দুই হাসপাতালের কর্তৃপক্ষই অবশ্য মুখ খুলতে চাননি। যদিও, দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ নীলাদ্রি সেন জানাচ্ছেন, চিকিৎসকের ইচ্ছার উপরে ছেড়ে দেওয়া হলে, বিনা কারণে কখনই সিজ়ার প্রসবকে উৎসাহ দেওয়া হয় না।
এই পরিসংখ্যান সামনে আসায় চিন্তিত বিশেষজ্ঞেরা। স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সমরেন্দ্রকুমার বসু জানান, সিজ়ারের ক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে প্রসবের তুলনায় রক্তক্ষরণের সম্ভবনা অনেক বেশি। তা ছাড়া, সিজ়ার করার আগে অজ্ঞান করার পরে জ্ঞান না ফেরা, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। পাশাপাশি, সাধারণ ভাবে প্রসবের তুলনায় সিজ়ারের ক্ষেত্রে মা ও সদ্যোজাতের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কিছুটা বেশি সময় লাগতে পারে। সমরেন্দ্রের পরামর্শ, “মায়ের উচ্চ রক্তচাপ, সন্তান মার্তৃগর্ভে ঠিক জায়গায় না থাকলে সিজ়ার করা প্রয়োজন। তা না হলে সাধারণ ভাবে প্রসবই বাঞ্ছনীয়।”
কেন বাড়ছে সিজ়ার প্রসব? নীলাদ্রি ও সমরেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ, প্রয়োজন ছাড়া সিজ়ারের সংখ্যা বাড়ার অন্যতম কারণ হল, মা এবং পরিবারের সদস্যদের সময় ও ধৈর্য কমে আসা। অনেক সময় অন্তঃসত্ত্বাদের একটু বেশি ব্যথা হলেই পরিবার সিজ়ার করার জন্য চাপ দেন। এই পরিস্থিতিতে সমস্যা এড়াতে চিকিৎসকও সিজ়ার করতে বাধ্য হন। পাশাপাশি, আরেকটি কথা জানাচ্ছেন দুই চিকিৎসকই। তাঁরা জানাচ্ছেন, এক বার সিজ়ারের মাধ্যবে প্রসব হলে, পরবর্তী সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রেও একই পন্থা নিতে হয়। পাশাপাশি, দুই সন্তানের জন্মের ব্যবধান কমপক্ষে থাকা উচিত তিন বছর। কিন্তু বাস্তবে অনেক সময়েই তা হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, গর্ভধারণের পরেই, স্বাভাবিক প্রসব করাতে হলে, অন্তঃসত্ত্বা ও তার পরিবারকে নিয়মিত দক্ষ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে প্রায় একই রকম পর্যবেক্ষণ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) শেখ মহম্মদ ইউনুসেরও। পাশাপাশি, তিনি বলেন, “সিজ়ারের সংখ্যা কমাতে সরকার ২০২২-এর শেষ থেকে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। উপযুক্ত কারণ ছাড়া সিজ়ার করতেও নিষেধ করা হয়েছে। এ জন্য সিজ়ারিয়ান সেকশন অডিট চালু করা হয়েছে। তাই প্রতিটি সিজ়ারের ক্ষেত্রে কারণ ব্যাখা করতে হচ্ছে। এর
সুফল মিলবে।”