গোপালপুর মৌজায় বড়শুলের শিল্প তালুক ২। ছবি: জয়ন্ত বিশ্বাস
শিল্পতালুকের আঠারোটি কারখানার মধ্যে চলছে ছ’টি। বারোটিতে ঝুলছে তালা। বন্ধ কারখানাগুলি খোলার কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা জানা নেই স্থানীয়দের। বিরোধীদের অভিযোগ, বন্ধ কারখানাগুলি না খুলেই সেখানে আরও একটি শিল্পতালুক গড়ছে রাজ্য সরকার। লোকসভা ভোট এগিয়ে আসতেই চর্চায় উঠে এসেছে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার অন্তর্গত বড়শুল শিল্পতালুক। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, শিল্পতালুক তৈরি ঘোষণায় চাকরি পাওয়ার যে আশা তৈরি হয়েছিল, তা অস্তাচলের পথে।
বিরোধীদের অভিযোগ, যে সব লক্ষ্যে শিল্পতালুক গড়া হয়েছিল, সেগুলির কোনওটিই পূরণ হয়নি। পূরণ হয়েছে শুধু শাসক দলের রাজনৈতিক স্বার্থ। কারখানা বন্ধ হওয়ার দায় পূর্বতন বাম সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে তৃণমূলের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্পক্ষেত্রে বর্ধমানকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে নতুন শিল্পতালুক গড়ছেন।
১৯৫৮-এ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায় বর্ধমান ২ ব্লকের বড়শুল গ্রামে ১৬৫.০৪ একর জায়গায় গড়ে তোলেন গ্রামীণ উপনগরী ‘উন্নয়নী’। তাকে ঘিরে গড়ে ওঠে ব্লক অফিস-সহ নানা সরকারি কার্যালয়। স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সেখানে গড়া হয়েছিল শিল্পতালুক। নাম দেওয়া হয় শিল্পতালুক ১। এখানে ১৮টি ‘শেড’ রয়েছে। পেরেক, ফ্লাই অ্যাশের ইট, বিভিন্ন রকমের পাইপ, বিদ্যুতের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা রয়েছে সেখানে। যদিও বর্তমানে চালু রয়েছে মাত্র ছ’টি কারখানা। বাকিগুলিতে তালা ঝুলছে। চালু থাকা কারখানাগুলিতে এলাকার ৫০-৫৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। বাকিরা আসেন বাইরে থেকে। সম্প্রতি শিল্পতালুকের জলনিকাশি ব্যবস্থা, শেড ও রাস্তা সংস্কার এবং রঙের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখনও বন্ধ ইউনিটগুলি চালু হয়নি। কবে হবে তা জানেন না কেউ। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, ওই ১২টি কারখানার কয়েকটি বন্ধ হয়েছিল বাম আমলে। বাকিগুলি তৃণমূল জমানায়। কিন্তু সেগুলি চালুর কোনও হেলদোল প্রশাসনের তরফে দেখা যায়নি।
২০১৫-এ এই শিল্পতালুক ১-এর পাশেই গোপালপুর মৌজায় ১৭.৭৩ একর জমিতে শিল্পতালুক ২ তৈরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০২২-এ শুরু হয় সীমানা পাঁচিল, রাস্তা, নিকাশি-সহ পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ। প্রশাসন সূত্রের খবর, এই শিল্পতালুকে ৯৮টি ‘প্লট’ হবে। সেখানে আড়াই হাজার মানুষ কাজ করবেন। যদিও প্রশ্ন উঠেছে, শিল্পতালুক ১-এ বন্ধ ১২টি কারখানা চালু না করে ফের নতুন একটি শিল্পতালুক তৈরি করলে কর্মসংস্থানের লক্ষ্য কি পূরণ হবে।
কাজের খোঁজ করছেন বড়শুলের যুবক নবকুমার রায়। তিনি বলেন, ‘‘কী কারণে ১২টি শেড বন্ধ রয়েছে জানি না, তবে কারখানা চালু হলে এলাকার বহু বেকার ছেলের কর্মসংস্থান হবে। পরিবর্তন হবে আর্থসামাজিক পরিস্থিতির।’’ জগদীশ সরকার, সুমিত রায়েরা বলেন, ‘‘শিল্প হলে বেকারদের কর্মসংস্থান হবে।’’ কিন্তু কবে সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে, তা জানেন না কেউ।
শিল্পতালুকের বেহাল দশা নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছেন সিপিএমের স্থানীয় এরিয়া কমিটির সদস্য দেবকুমার দে। তাঁর কথায়, ‘‘এটা ঠিক যে বড়শুল ১ শিল্পতালুকের কিছু কারখানা বাম আমলে বন্ধ হয়েছিল। সেগুলি খোলার চেষ্টাও হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কী চেয়েছিলেন, তা সকলেই জানেন। কাদের জন্য শিল্পায়ন হয়নি, তা-ও জানেন সকলে।’’ এর পরেই বর্তমান রাজ্য সরকারকে বিঁধে তিনি বলেন, শিল্প নিয়ে মানুষকে ঠকাচ্ছে তৃণমূল সরকার। শিল্পতালুক ১-এ বন্ধ পড়ে থাকা কারখানাগুলি না খুলে তার পাশে আরও একটি শিল্পতালুক গড়ার কোনও অর্থই হয় না। এটা মানুষকে বোকা বানানো ছাড়া আর কিছুই নয়।
বিজেপি নেতা রাধাকান্ত রায়ের খোঁচা, মুখ্যমন্ত্রী মাঝেমধ্যেই বিদেশ যান শিল্প আনতে। বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে শিল্প সম্মেলন হয়। কিন্তু শিল্প গড়ে ওঠে না। উল্টে বন্ধ হয়ে যায়। গোটা রাজ্যেই শিল্পের চিত্র বেহাল। এখানে শিল্প পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। তাই কারখানা বন্ধ হওয়টাই স্বাভাবিক।
ব্লক তৃণমূল সভাপতি পরমেশ্বর কোনারের পাল্টা অভিযোগ, শিল্পতালুক ১ এর কারখানাগুলি বন্ধ হয়েছে বাম আমলেই। বর্তমান প্রশাসন সেগুলি খুলতে তৎপর হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নতুন করে এই এলাকায় শিল্পতালুক তৈরি করছেন। বিজেপিকে তাঁর কটাক্ষ, পাঁচ বছর এই এলাকায় বিজেপি সাংসদ রয়েছেন। তিনি এক বারও এসেছেন? শিল্পতালুক চোখে দেখেছেন? বিজেপির মুখে এ সব কথা মানায় না।