—প্রতীকী ছবি।
সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি হরফে পড়ানোর ব্যবস্থা নেই স্কুলে। ফলে, অঙ্গনওয়াড়ি থেকে প্রাথমিকে গিয়ে বিপাকে পড়ছে আদিবাসী খুদে পড়ুয়ারা। তাদের স্কুলমুখো করতে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকেরা। ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরাও। কাঁকসা ব্লকে আদিবাসী প্রধান এলাকার প্রায় ২০টি প্রাথমিক স্কুলে এমনই পরিস্থিতি, অভিযোগ অভিভাবকদের। বিডিও পর্ণা দে বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
কাঁকসার প্রায় ২০টি প্রাথমিক স্কুলের সিংহভাগ পড়ুয়া আদিবাসী সম্প্রদায়ের। কিন্তু স্কুলগুলিতে অলচিকি লিপিতে পড়ানোর শিক্ষক নেই বলে অভিযোগ। যেমন, বনকাটি পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ১২টি স্কুল রয়েছে। একটিতেও অলচিকির শিক্ষক নেই। তবে, কুলডিহার একটি প্রাথমিক স্কুলে অলচিকি লিপি শেখানোর শিক্ষক রয়েছেন।
অভিভাবকদের অভিযোগ, ভাষাগত সমস্যার কারণে তাঁদের ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে পড়ছে। শিক্ষকদের কথা তারা ঠিকমতো বুঝতে পারছে না। ফলে, স্কুলের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। তাই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রাথমিক স্কুলে অলচিকি লিপির বই ও শিক্ষকের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। অভিভাবকদের সঙ্গে একমত প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকেরাও। তাঁরা জানান, পড়াতে গিয়ে এই সমস্যার মুখোমুখি তাঁরা প্রতিনিয়ত হন। তাঁরা যা বলেন, সেটা অনেক সময়ে, বিশেষত যারা সদ্য প্রাথমিক স্কুলে পা দিয়েছে, তাদের অধিকাংশই বুঝতে পারে না। ফলে, সময় পেরিয়ে যায়, পড়াশোনা এগোয় না। এই ভাষা সমস্যার জন্য অনেক ছেলেমেয়ের ভীতি তৈরি হয় স্কুল নিয়ে। তাদের স্কুলে আনাই তখন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
এলাকার বাসিন্দা বিবেকানন্দ লোহার বলেন, ‘‘আমাদের আদিবাসী শিশুরা নিজস্ব ভাষায় শিক্ষালাভের সুযোগ পাচ্ছে না। বাংলা ভাষা শিখতে অনেক সময় লেগে যায়। সেই হিসেবে ওরা পিছিয়ে পড়ছে।’’ সন্ন্যাসী সোরেন বলেন, ‘‘আমাদের ছেলেমেয়েরা ৫-৬ বছরে গিয়ে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হচ্ছে। আমাদের ভাষায় যদি শিক্ষকেরা কথা বলেন, ওদের খুব সুবিধা হবে। তা হচ্ছে না। বাংলা ভাষায় পড়ানো হয় স্কুলে। ফলে ছেলেমেয়েরা আগ্রহ হারাচ্ছে। শিক্ষকদের দেখলে ভয় পাচ্ছে। আমাদের দাবি, অলচিকি লিপিতে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হোক।’’
কাঁঠালডাঙা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ঋজু কর্মকার বলেন, ‘‘অঙ্গনওয়াড়ি থেকে আসার পরে আমরা যখন বাংলা বা ইংরেজি অক্ষর শেখাতে যাই, ওরা মুখের দিকে চেয়ে থাকে। বাংলা ভাষায় ওদের কোনও নির্দেশ দিলেও গোড়ায় তা বুঝতে পারে না। ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। তবে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’’ তিনি জানান, প্রাক প্রাথমিক এভাবেই পেরিয়ে যায়। প্রথম শ্রেণিতে উঠে ধীরে ধীরে পড়াশোনা শুরু করছে ওই সব ছেলেমেয়েরা। তিনি বলেন, ‘‘অলচিকি লিপির বই ও শিক্ষক থাকলে পড়ার আগ্রহ বাড়ত বলেই মনে হয়।’’
কাঁকসার বিডিও পর্ণা দে-র আশ্বাস, আদিবাসী ছেলেমেয়েরা যাতে নিজেদের ভাষায় পড়াশোনার সুযোগ পায়, আদিবাসী প্রধান স্কুলগুলিতে যাতে সাঁওতালি ভাষার শিক্ষকের ব্যবস্থা করা যায়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা বলা হবে।