খণ্ডঘোষে এই অফিসেই আগুন লেগেছিল। নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুরে একটি প্রশাসনিক সভায় ই-নিলাম করে টোল আদায়ের জন্য খণ্ডঘোষের শশঙ্গা পঞ্চায়েতকে রাজ্যের মডেল করার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই পঞ্চায়েতের টোল অফিসে বুধবার দুপুরে কী কারণে আগুন লাগানো হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের দাবি, মদ খাওয়াকে কেন্দ্র করে টোল অফিসের সামনে দু’পক্ষের মধ্যে অশান্তি বাধে। তর্কাতর্কি থেকে মারপিট, সেখান থেকে অস্থায়ী টোল অফিসে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বুধবার রাতে দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতরা হলেন, শশঙ্গা গ্রামেরই কৃষ্ণ রায় ও হেমন্ত রায়। ঘটনাস্থল থেকে পোড়া বাঁশ, পোড়া কাঠের টেবিল, পুড়ে যাওয়া প্লাস্টিকের চেয়ারও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ধৃতদের বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হলে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই টোলের ইজারাদার, স্থানীয় ওঁয়ারি গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ হোসেন অভিযোগ করেছেন। তাঁর দাবি, শশঙ্গায় টোল আদায়ের জন্য বাঁশের কাঠামো ও খড়ের ছাউনির অফিস ছিল। বুধবার বিকেলে সেখানে কয়েকজন আচমকা হামলা চালায়। টোলের কর্মীদের মারধর করে, হামলাকারীরা অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। কাগজপত্র, পাঁচটি মোবাইল ফোন লুট হয় বলেও তাঁর দাবি। বেশ কয়েকজনের নামে অভিযোগ করেছেন তিনি।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, অভিযোগকারীরা গত বছরের (২০২১-২২) টোলের ইজারাদারের কর্মী ছিলেন। গত ৩ মার্চ ই-নিলামের মাধ্যমে নতুন ইজারাদার নিয়োগ করা হয়। নতুন ইজারাদার ফিরোজ তাঁদের টোল আদায়ের জন্য নিয়োগ না করায় ওই সব কর্মীদের মনে ক্ষোভ ছিল। বুধবার দোলের দুপুরে টোলের অফিসে এ সব নিয়ে তর্কাতর্কি থেকেই আগুন লাগানো হয় বলে অভিযোগ। যদিও ইজারাদারের দাবি, ই-নিলামের আগে তাঁর সঙ্গে কেউ কেউ আলাপ-আলোচনা করতে চেয়েছিল। তিনি রাজি হননি। ই-নিলামের মাধ্যমে তিনি টোল আদায়ের দায়িত্ব নেন। তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা হয়তো মেনে নিতে পারছে না। কিন্তু আমি ভাবতেই পারছি না টোলের অফিস পুড়িয়ে দেবে কিংবা কর্মীদের মারধর করবে।’’
স্থানীয়দের একাংশের আবার দাবি, টোলের নিলাম হওয়ার আগেই পঞ্চায়েতের বিল দিয়ে বেআইনি ভাবে টাকা আদায় করা হচ্ছিল। যাঁদের দিয়ে এই টাকা আদায় করা হচ্ছিল, ই-নিলামের পরে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই রাগেও টোল-অফিসে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটতে পারে।
পঞ্চায়েত সূত্রে যানা যায়, ২০২১ সালে টোল আদায় করে শশঙ্গা পঞ্চায়েত পেয়েছিল ৫৪ লক্ষ টাকা। ২০২২ সালে প্রথমবার ই-নিলাম করে পঞ্চায়েতের ঘরে ঢুকেছিল ১ কোটি ৯৯ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। আর গত ২৪ ডিসেম্বর একই রাস্তার টোলের জন্য ই-নিলাম করে পঞ্চায়েত পেয়েছে চার কোটি ৪৫ হাজার টাকা। ই-নিলামে মডেল হওয়ার কথা যে পঞ্চায়েতের, তার এই হাল কেন? কেনই বা বেআইনি ভাবে টোল আদায়ের অভিযোগ উঠছে? পঞ্চায়েত প্রধান প্রকাশ ঘোষ শুধু বলেন, ‘‘পুরোটাই পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।’’