থাকতে নারাজ অনেকে। ফাইল চিত্র।
‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ (গ্রামীণ) প্রকল্পে ভূমিহীন পরিবারকে পাট্টা দিয়ে বাড়ি তৈরি করার সুযোগ রয়েছে। সেই প্রকল্পের স্থায়ী তালিকার মধ্যে প্রায় ৭৩ শতাংশ উপভোক্তাই জেলা পরিষদকে জানিয়েছে, সরকারের দেওয়া জায়গায় উঠে গিয়ে ওই প্রকল্পের বাড়িতে থাকতে রাজি নয় তারা। বাকি ৭৩৮টি পরিবারের মধ্যে ৩২৮টি পরিবারের জায়গা চিহ্নিত হয়ে বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে বলে জানায় জেলা পরিষদ।
জেলা পরিষদের উপ-সচিব, প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা মৃন্ময় মণ্ডলের দাবি, “ভূমিহীনদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রকল্পে আমাদের জেলা রাজ্যের মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে। আবার জায়গা চিহ্নিত করে অনুমোদন করার দিকেও আমাদের জেলা শীর্ষে রয়েছে। রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরও ‘ব্যতিক্রমী’ কাজ হয়েছে বলে জানিয়েছে।’’ জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানে ভূমিহীনদের বাড়ি করে দেওয়ার প্রকল্পে স্থায়ী তালিকায় ২,৭৩৬ জনের নাম ছিল। কিন্তু পাট্টা দেওয়ার বিষয়টি একদম এগোচ্ছিল না। জেলাশাসক তথা জেলা পরিষদের নির্বাহী আধিকারিক প্রিয়াঙ্কা সিংলা ব্লক, পঞ্চায়েত স্তরের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে সময়সীমা বেঁধে ভূমিহীনদের প্রথমে পাট্টা দেওয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে খাস জমি খুঁজে বার করতে বলা হয়।
জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানান, পঞ্চায়েত ধরে সরকারি জমি খোঁজার কাজ শুরু হয়। কিন্তু যে সব জায়গায় সরকারি জমি মেলে, সেখানে উপভোক্তারা যেতে নিমরাজি হন। বারবার বোঝানোর পরেও, তাঁরা দীর্ঘদিন ‘দখলে’ রাখা জায়গা ছাড়তে রাজি হননি। ২,৭৩৬ জনের মধ্যে ১,৯৯৮ জনই লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, পছন্দ মতো জায়গা না মেলায় নিজেদের জায়গা ছেড়ে সরকারের অনুদানের তৈরি বাড়িতে যাবেন না। উপভোক্তা শেখ মোকসেম, বিজয় ক্ষেত্রপালদের দাবি, “বংশ পরম্পরায় সবাইকে নিয়ে যেখানে রয়েছি, সেখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ফাঁকা জায়গায় আমাদের ঘর দেবে বলে জানিয়েছিল। সেখানে রাস্তা-বিদ্যুৎ কিছুই নেই। থাকব কী ভাবে? তাই ঘরের দরকার নেই বলে জানিয়েছি।’’ ব্লক থেকে ১,৯৯৮ জনের রিপোর্ট আসার পরেই প্রশাসন তাঁদের নাম বাদ দিয়েছে।
কয়েক মাসের মধ্যে ভূমিহীনদের বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেমে আসে ৭৩৮-এ। প্রশাসনের দাবি, তার মধ্যেও অর্ধেক জন সরকারের জমিতে বাড়ি তৈরি করতে ‘আপত্তি’ জানিয়েছিল। পঞ্চায়েত বা অন্য কোনও সহযোগিতায় বেশ কিছু ‘ভূমিহীন’ জায়গা জোগাড় করায়, তাঁদের বাড়ি তৈরি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৩২৮ জন ভূমিহীন বাড়ি পেয়ে গিয়েছেন। ৩৫৬ জনের জায়গা ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখে বাড়ি তৈরির অনুমতির জন্য পাঠানো হয়েছে। পড়ে থাকা ৫৪ জনের নাম বাতিলের তালিকায় উঠবে কি না, সে ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি জেলা পরিষদ।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ১৬টি ব্লকে ভূমিহীন পরিবার ছিল। তার মধ্যে রায়না ২ ব্লকের সাত উপভোক্তাই সরকারি জমি নিতে অস্বীকার করেছেন। মেমারি ১ ব্লকে ১৬৫ জন ও মেমারি ২ ব্লকে ১৯০ জন উপভোক্তা বাড়ি তৈরির অনুমোদন পেয়েছেন।