Migrant Workers

করোনা-মুক্ত হয়েও কাজ না মেলার, নালিশ

প্রশাসনের কর্তাদের অবশ্য আশ্বাস, নানা ভাবে করোনা-জয়ীদের পাশে থাকার চেষ্টা করা হচ্ছে।

Advertisement

প্রণব দেবনাথ

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২০ ০৫:০৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

করোনা-মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছেন তাঁরা। তাঁদের মতো করোনা-জয়ীদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে সরকার। একশো দিনের প্রকল্প-সহ নানা ভাবে কাজ দেওয়ার কথা বলা হলেও আদতে বিশেষ কিছু মিলছে না, অভিযোগ কাটোয়া মহকুমায় সুস্থ হয়ে ওঠা অনেকেরই। এলাকাবাসীর অনেকে এখনও ‘অন্য চোখে’ দেখায় নিজেরাও আগের মতো কাজ করতে পারছেন না বলে দাবি তাঁদের। প্রশাসনের কর্তাদের অবশ্য আশ্বাস, নানা ভাবে করোনা-জয়ীদের পাশে থাকার চেষ্টা করা হচ্ছে।

Advertisement

কাটোয়া মহকুমা প্রশাসন ও স্থাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মে মাসের শেষ দিক থেকে মহকুমার পাঁচ ব্লকে ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বহু প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক ফিরতে শুরু করে। তাঁদের অনেকের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। হাসপাতালে বা নিভৃতবাসে থাকার পরে, করোনা রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ এলে ছাড়া পেয়ে তাঁরা বাড়ি ফিরেছেন। তাঁদের অনেকেরই দাবি, ‘‘সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরে নিয়ম মেনে ১৪ দিন বাড়িতে ছিলাম। কাজ না করলে এখন আর চলছে না। সরকার থেকে চাল দিলেও তেল, নুন ও আনাজ কেনার টাকা তো দরকার। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কোনও কাজ পাওয়া যাচ্ছে না।’’ ট্রেন না চলায় পুরনো কর্মস্থলেও ফিরতে পারছেন না বলে জানান তাঁরা।

কেতুগ্রামের কান্দরার বাসিন্দা এক করোনা-জয়ীর অভিযোগ, ‘‘আগে এলাকায় কখনও ফল বিক্রি করে, কখনও টোটো চালিয়ে আয় করতাম। করোনা ধরা পড়ার পরে, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছি মাসখানেক হয়ে গেল। কিন্তু এখনও রাস্তায় বেরোলে আমাকে দেখে অনেকে দূরে সরে যান। কাজে না বেরোলে আবার সংসার চলবে না। খুব সমস্যায় পড়ছি।’’

Advertisement

সরকারের তরফে করোনা-জয়ীদের কাজ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে তা মিলছে না বলে অভিযোগ করেন অনেকে। কাটোয়ার জগদানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বীরবেগুন গ্রামের বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবকের কথায়, ‘‘দিল্লিতে এক গয়না বিক্রির সংস্থায় কাজ করতাম। ‘লকডাউন’-এর শুরুতে খুব কষ্ট করে এলাকায় ফেরার পরে, করোনা ধরা পড়ে। দুর্গাপুরের কোভিড হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরি। শুনেছি, করোনা-জয়ীদের জন্য না কি নানা সুবিধা রয়েছে। পঞ্চায়েত থেকে জানিয়েছিল, একশো দিনের কাজ দেওয়া হবে। কিন্তু প্রায় চার মাস হতে চলল, এখনও পর্যন্ত কোনও কাজ পাইনি। অর্ধাহারে দিন কাটছে!’’

ওই গ্রামেরই আর এক করোনা-জয়ীর মায়ের অভিযোগ, ‘‘ছেলের করোনা হওয়ায় এলাকায় প্রায় একঘরে হয়ে পড়েছিলাম। সুস্থ হয়ে ফেরার পরে, ছেলে চার দিন পঞ্চায়েতের দেওয়া কাজ করে আটশো টাকা রোজগার করেছে। তা দিয়ে কি আর সংসার চলে?’’ জগদানন্দপুর পঞ্চায়েতের প্রধান গৌতম ঘোষালের আশ্বাস, ‘‘ওই করোনা-জয়ীদের জব-কার্ড করিয়ে একশো দিনের কাজ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওঁদের পাশে আছি।’’

বিভিন্ন ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, করোনা-আক্রান্ত দরিদ্র বাসিন্দাদের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। জব-কার্ড করিয়ে একশো দিনের কাজে লাগানোর চেষ্টাও চলছে। এ ছাড়া সেলাইয়ের কাজ-সহ নানা প্রকল্পে তাঁদের যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। মহকুমাশাসক (কাটোয়া) প্রশান্তরাজ শুক্ল বলেন, ‘‘করোনা-জয়ীদের রাস্তাঘাটে দেখলে উৎসাহ দেওয়া, শুভেচ্ছা জানানো দরকার। এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। প্রশাসনও নানা ভাবে তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement