প্রতীকী ছবি
‘কোভিড-১৯’ অতিমারির জন্য প্রত্যেকটি কলেজকে পরীক্ষা সংক্রান্ত ফি মকুব করার নির্দেশিকা জারি করেছিল বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু অনেক কলেজই পরীক্ষা সংক্রান্ত যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, তাতে ‘ফি’ দিতে বলা হয়েছে। শুধু পরীক্ষার ফি নয়, লকডাউনের জন্য দীর্ঘ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পরেও সিমেস্টার পিছু টিউশন ফি, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি, ক্রীড়া সংক্রান্ত খাতেও পড়ুয়াদের কাছে টাকা আদায় করছে বেশ কিছু কলেজ। সোমবার বিষয়টি নিয়ে বর্ধমানের রাজ কলেজের কয়েকজন পড়ুয়া ও এসএফআই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ই-মেলে অভিযোগ করেছেন। ঘটনাচক্রে, এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বৈঠকেও রাজ কলেজ পড়ুয়াদের কাছে ‘অস্বাভাবিক’ টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ ওঠে। বর্ধমানের জেলাশাসক তথা ওই কলেজের প্রশাসকের কাছে বিস্তারিত জানিয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩ মার্চ রাজ কলেজের তরফে পরীক্ষা-সংক্রান্ত যে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় তাতে পরীক্ষা ফি ধার্য করা হয় ১০০ টাকা। এ ছাড়া, বিদ্যুতের বিল বাবদ ১৭৫ টাকা, লাইব্রেরি ফি ২০০ টাকা, নিরাপত্তা রক্ষী ও জেনারেটরের জন্যও ১০০ টাকা ফি ধার্য করা হয়। এ দিনের বৈঠকে কলেজসমূহের পরিদর্শক (আইসি) সুজিত চৌধুরী অভিযোগ করেন, রাজ কলেজ পড়ুয়াদের কাছ থেকে অস্বাভাবিক ফি নিচ্ছে। শহরের অন্য কলেজের তুলনায় আড়াই-তিন গুণ টাকা নেওয়া হচ্ছে। পড়ুয়ারা ই-মেল করে অভিযোগ জানাচ্ছেন। বারবার বলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ শুনছেন না, দাবি তাঁর। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন (কলা) রমেন সর জানান, ওই কলেজের প্রশাসক জেলাশাসক। তাঁকে চিঠি দিয়ে পুরো বিষয়টি জানিয়ে হস্তক্ষেপ করতে বলা হোক। বৈঠকেই আইসিকে এ ব্যাপারে চিঠি করতে বলা হয়।
রাজ কলেজের অধ্যক্ষ নিরঞ্জন মণ্ডল অবশ্য অস্বাভাবিক টাকা আদায়ের কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, “সরকারের নির্দেশিকা মেনেই পড়ুয়াদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে। আর ২০১৮ সালে কলেজের পরিচালন সমিতি পড়ুয়াদের কাছে ফি আদায়ের যে কাঠামো তৈরি করেছিলেন, সেটাই মানা হচ্ছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমি ইচ্ছে করলেই কি ফি কমাতে বা বাড়াতে পারি?”
এসএফআইয়ের অভিযোগ, শুধু রাজ কলেজ নয়, মেমারি কলেজ-সহ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কলেজ নির্দেশিকা অমান্য করে পরীক্ষা ফি নিচ্ছে। মেমারি কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস চক্রবর্তী মেনেও নিয়েছেন ফি নেওয়ার কথা। তিনি বলেন, “আমি পরীক্ষা ফি নিচ্ছি। আমাকে তো কেউ নিতে নিষেধ করেনি।’’ বর্ধমান শহরের বিবেকানন্দ কলেজের অধ্যক্ষ এস ঘোষালের আবার দাবি, “নানা রকম ফি বাদ দিয়ে ন্যূনতম টাকা পড়ুয়াদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে।’’
এসএফআইয়ের জেলা কমিটির সম্পাদক অনির্বাণ রায়চৌধুরী বলেন, “নির্দেশিকা মানা দূর, পড়ুয়ারা গত ছ’মাসে মাত্র ৪৫ দিন কলেজ যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। অথচ, তাঁদের কাছে সিমেস্টার পিছু মোটা টাকা আদায় করা হচ্ছে।’’ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অভিজিৎ মজুমদার বলেন, “খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। আমরা বারবার কলেজগুলির কাছে আবেদন করেছি। সোমবার এ নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। তার পরেও ই-মেলে অনেকগুলি অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।’’