মনসা মেটে। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
পঞ্চায়েত ও বিধানসভা ভোট মিলিয়ে বার দশেক প্রার্থী হয়েছেন তিনি। জেতেননি কোনও বারই। তবু গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে ভোটে দাঁড়াতে পিছপা হন না আউশগ্রামের কুড়ুম্বা গ্রামের মনসা মেটে। এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জেলা পরিষদের ৬২ নম্বর আসনে এসইউসিআইয়ের প্রার্থী হয়েছেন তিনি।
কমিউনিস্ট পরিবারে বেড়ে ওঠা পেশায় দিনমজুর মনসা পুঁজিবাদীদের উৎখাত করে সমাজতন্ত্র স্থাপনের স্বপ্ন দেখেন। তাঁর দাবি, ‘‘কুড়ি বছর বয়স থেকে দল করছি। এখন ৫৬ বছর বয়স আমার। পুরো পরিবারই দলের কর্মী।’’ এখনও পর্যন্ত চার বার বিধানসভা, পাঁচ বার জেলা পরিষদ এবং এক বার পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন তিনি। কিন্তু বার বার হেরেও লড়াইয়ের ময়দানে থাকা কিসের জোরে? ওই প্রৌঢ়ের দাবি, ‘‘নির্বাচনে হারা-জেতা বড় কথা নয়। সুস্থ ভাবে মানুষ তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করুক। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জায়গা পাক। এই জন্যই ভোটে দাঁড়ানো।’’ সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্নে এখনও অনেক মানুষের সমর্থন পাচ্ছেন বলেও দাবি তাঁর।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের আসনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। অন্য কোনও দলের প্রার্থী না থাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে একাই লড়েছিলেন। পরিবারের দাবি, উনি প্রার্থিপদ তুলে নিলে আর ভোট করাতে হবে না ভেবে অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের চাপ দেন। ভোটের পরে দীর্ঘ দিন ঘরছাড়া ছিলেন তিনি। মারধর, হুমকিরও সম্মুখীন হতে হয় বলে অভিযোগ। তবু তাঁকে নড়ানো যায়নি। এ বার অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা বেশি। জেলা পরিষদের ওই আসনে সব বিরোধী দলই প্রার্থী দিয়েছে।
মনসা স্ত্রী মালতি মেটে বলেন, ‘‘পৈত্রিক সূত্রে আড়াই কাঠা জমি পেয়েছিলেন স্বামী। পারিবারিক কারণে সেটা বিক্রি করতে হয়। এখন অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে সংসার চলে আমাদের।’’
দলের পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক অনুরুদ্ধ কুন্ডু বলেন, ‘‘খেতমজুর পরিবারের সন্তান মনসা মেটে দলের একনিষ্ঠ কর্মী। উনি দলের জেলা কমিটির সদস্য ও কৃষক সংগঠন এআইকেকেএমএস-এর জেলা কমিটির সহ-সম্পাদক। সিপিএম আমল থেকে তৃণমূল, বরাবর দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। ওঁর মতো কর্মীরা দলের সম্পদ।’’ শীঘ্রই প্রচার শুরু হবে বলেও জানান তিনি। আউশগ্রামের তৃণমূল বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার বলেন, ‘‘রাজনৈতিক মতবাদ আলাদা হলেও ওঁর লড়াইয়ের মানসিকতাকে সম্মান জানাই।’’