মঙ্গলকোটের জালপাড়ায় ঘটনার পরে অবরোধ। নিজস্ব চিত্র
তিন দিন ধরে চলছে সহরায় বা বাঁধনা পরব। তার মাঝেই রাস্তায় নাচ দেখিয়ে ‘পার্বণী’ তুলতে গিয়ে ট্রাকের চাকায় পিষে মৃত্যু হল বিমল মুর্মু (৫২) নামে এক প্রৌঢ়ের। মঙ্গলকোটের জালপাড়া-আদিবাসীপাড়া এলাকায় ওই দুর্ঘটনার জেরে বুধবার, উৎসবের শেষ দিনের আনন্দ শোকে পরিণত হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ ১০-১২ জন পুরুষ, মহিলার দল ওই পাড়ার কাছে গুসকরা-নতুনহাট রাস্তায় ধামসা মাদল নিয়ে নাচ-গান করছিলেন। রাস্তা দিয়ে যে গাড়িগুলি যাচ্ছিল সেগুলি দাঁড় করিয়ে ‘পার্বণীও’ আদায় করছিলেন কয়েকজন। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের অভিযোগ, ওই সময়েই গুসকরাগামী একটি দশ চাকার ট্রাকের চালক একটি নোট গাড়ির জানলা দিয়ে বার করে দ্রুত এগোতে যান। তখনই ট্রাকের সামনের চাকায় পিষে যান বিমল।
ওই দলে ছিলেন মৃতের স্ত্রী রানি মুর্মু। তিনি বলেন, “আমরা সবাই মিলে নাচতে গিয়েছিলাম। আমরা অন্য দিকে নাচছিলাম। তার মাঝেই সবর্নাশ হয়ে গেল!’’ মৃতের দাদা, মাদলবাদক দুর্গা মুর্মুরও দাবি, “৩-৪ টে গাড়ি পেরিয়ে যাওয়ার পরে দুর্ঘটনা ঘটে। গাড়িটা দাঁড়িয়ে টাকা দিলে এটা হত না। চলন্ত অবস্থায় টাকা দিতে গিয়ে সামনে পড়ে যায় ভাই।’’ দলে থাকা আহ্লাদি হাঁসদা, লক্ষ্মী বেসরারা বলেন, ‘‘মেয়েরা নাচছিল, আর মামা (বিমল) ট্রাক থেকে টাকা নিচ্ছিল। ওই ট্রাকের চালক এক হাতে টাকা দিচ্ছে, আর এক হাতে গাড়ি চালাচ্ছিল। বেখেয়ালে গাড়ি চালানোর জন্যই মরে গেল লোকটা।’’
দুর্ঘটনার পরে ,স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ট্রাকটি আটকে চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করে বলে অভিযোগ। ক্ষতিপূরণের দাবিতে রাস্তায় দেহ ফেলে অবরোধও শুরু হয়। পরে মঙ্গলকোট, আউশগ্রাম এবং ভাতার থানার পুলিশ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে অবরোধ তোলার চেষ্টা করেন। এসডিপিও (কাটোয়া )ত্রিদিব সরকার অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। প্রায় ঘণ্টা তিনেক পরে বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ অবরোধ ওঠে। আটক করা হয় ওই চালককে। তাঁকে মঙ্গলকোট ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে বলেও পুলিশের দাবি।
তবে ওই ঘটনার পরেও গুসকরা নতুনহাট রাস্তার বেশ কিছু জায়গায় একই ভাবে নাচগান করতে দেখা যায় অনেককে।