হাহাকার: হাসপাতালে অসীম সরকার। নিজস্ব চিত্র
মেয়ে বারবার বলছিল শান্তিনিকেতনে গিয়ে দোল খেলতে হবে। আর কোনও দিন রং খেলব না।— শনিবার গুসকরায় জাতীয় সড়কের উপরে পথ দুর্ঘটনায় স্ত্রী ও মেয়েকে হারিয়ে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে এই কথাগুলোই বলছিলেন বোলপুরের কাশিমবাজারের বাসিন্দা অসীম সরকার।
অসীমবাবু মোটরবাইকে চড়ে স্ত্রী সীতাদেবী (৫০) ও মেয়ে অন্তরাকে (২২) নিয়ে খণ্ডঘোষে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যান। ফেরার পথে গুসকরার শান্তিপুরে বোন শিখা দত্তের সঙ্গে দেখা করতে যান সীতাদেবী। সেখান থেকে এনএইচ ২বি জাতীয় সড়ক ধরে ফিরছিলেন বোলপুরে। অসীমবাবু বলেন, ‘‘সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছিল। সঙ্গে রাস্তায় ব্যাপক যানজট। রামনগর মোড়ের কাছে এক বার ব্রেক কষার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ে ও স্ত্রী মোটরবাইক থেকে পড়ে যান।’’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মুহূর্তের মধ্যে একটি পাথরবোঝাই ট্রাক পিষে দেয় সীতাদেবী ও অন্তরাকে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দু’জনের। উল্টো দিকে ছিটকে পড়েন অসীমবাবুও।
দেহ দু’টি উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান গুসকরা ফাঁড়ি ও আউশগ্রাম থানার পুলিশকর্মীরা। ঘটনার পরে এলাকায় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। এক ঘণ্টা পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। অসীমবাবুও গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালে বসেই শিখাদেবীর আক্ষেপ, ‘‘অন্তরা বারবার বলছিল, দোল খেলতে আজ, শান্তিনিকেতন যেতেই হবে। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় আমি বারণ করেছিলাম। কী যে হয়ে গেল!’’ ঘটনার খবর চাউর হতেই এলাকাবাসী জাতীয় সড়কের অবস্থা নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন। তাঁরা জানান, গুসকরা থেকে ভেদিয়া পর্যন্ত এনএইচ ২বি জাতীয় সড়কের দু’ধারে বেশ কয়েকটি হিমঘর রয়েছে। দিনভর সেখানে আলুবোঝাই ট্রাক্টরগুলি যাতায়াত করে। পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় রাস্তার উপরেই ট্রাক্টরগুলি দাঁড়িয়ে থাকে। এর জেরে গাড়ির সংখ্যা বাড়লেই তৈরি হয় যানজট। দোল উৎসব হওয়ায় এ দিন পর্যটকদের গাড়ির সংখ্যাও ছিল চোখে পড়ার মতো।
হিমঘর মালিকদের অবশ্য দাবি, রাস্তায় যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই এলাকায় সিভিক ভলান্টিয়ার ও পুলিশকর্মীরা থাকেন। তাঁদের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।’’