যাবজ্জীবন কারাদণ্ড তিন জনের

খুন করে পকেটে নিজের পরিচয়পত্র

কালনা ফাস্ট ট্রাক আদালতের বিচারক বিবেকানন্দ সূর হুগলির জিরাট অফিস পাড়ার বাসিন্দা অভিজিৎ দে-কে খুনের দায়ে এই সাজা দেন। এ ছাড়াও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছ’মাসের জেল হাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দয়াল দাস মজুমদার, রুইদাস মজুমদার ও সুমন বিশ্বাস নামে ওই তিন জনকে। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:২৩
Share:

—প্রতীকী ছবি।

মাদক খাইয়ে খুন করার পরে মুখটা পুড়িয়ে দিয়েছিলেন খুনি। পকেটে গুঁজে দিয়েছিলেন নিজের ভোটার কার্ড। নিহতকে পরিয়ে দিয়েছিলেন নিজের পোশাক। যাতে দেহ শনাক্ত হলে সবাই ভাবে এটা তিনি। আর জীবনবিমার মৃত্যুকালীন মোটা অঙ্কের টাকাটাও পকেটে ঢোকে। যদিও পুলিশের চোখে ধুলো দিতে পারেননি। সোমবার এই খুনের ঘটনাতেই তিন জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক।

Advertisement

কালনা ফাস্ট ট্রাক আদালতের বিচারক বিবেকানন্দ সূর হুগলির জিরাট অফিস পাড়ার বাসিন্দা অভিজিৎ দে-কে খুনের দায়ে এই সাজা দেন। এ ছাড়াও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছ’মাসের জেল হাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দয়াল দাস মজুমদার, রুইদাস মজুমদার ও সুমন বিশ্বাস নামে ওই তিন জনকে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৬ মার্চ ভোরে পূর্বস্থলীর বিশ্বরম্ভা এলাকায় এক অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের দেহ পড়ে থাকতে দেখে অবিনাশ রায় নামে স্থানীয় এক যুবক। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে দেখে, মুখটি বিকৃত। ময়না-তদন্তে পাঠানোর পরে মৃত যুবকের গেঞ্জির পকেট থেকে দয়াল দাস মজুমদার নামে একটি ভোটার কার্ডের ফটোকপি উদ্ধার হয়। দেখা যায়, কাগজের উল্টো দিকে একটি ফোন নম্বরও রয়েছে। পুলিশ ফোন করলে ফোন ধরেন রুইদাস মজুমদার নামে এক যুবক। হাসপাতালের এসে তিনি দাবি করেন, তাঁদের বাড়ি কাটোয়ার চরপাতাইহাট এলাকায়। দেহটি তাঁর দাদার। দেহ নিয়ে চলেও যান তিনি। তবে তাঁদের কথাবার্তায় সন্দেহ হয় পুলিশের। ওই এলাকায় তদন্তে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, দীর্ঘদিন আগেই দয়ালরা ওই এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছেন। মৃতদেহের ছবি দেখেও চিনতে পারেননি কেউ। এরপরেই পুলিশ রুইদাসকে ধরে।

Advertisement

পুলিশের দাবি, ধৃত জেরায় স্বীকার করেন দেহটি দয়ালের নয়। এরপরে মালদহের গাজল থেকে পূর্বস্থলী থানার পুলিশ দয়ালকেও ধরে। ধরা পড়েন দয়ালের ভাগ্নে নদিয়ার ধানতলার বাসিন্দা সুমন বিশ্বাস। জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে, মৃতদেহটি জিরাটের অভিজিৎবাবুর। তাঁর কাকা অজিত দে-র বাড়িতে ভাড়া থাকতেন দয়াল এবং তাঁর পরিবারের লোকজন। বেকার যুবক অভিজিৎকে রেলে চাকরি দেওয়ার টোপ দিয়ে ১৫ মার্চ নিয়ে যান দয়াল। গাড়ির মধ্যে মাদক মেশানো মদ খাওয়ানো হয় অভিজিৎকে। পরে মাথার পিছন থেকে শক্ত লোহার রড দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয়। এরপরে দয়াল নিজের জামা-প্যান্ট পরিয়ে, পকেটে পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিয়ে বিশ্বরম্ভা এলাকায় ফেলে দেয় দেহ। মুখও পোড়ানো হয়।

পুলিশের দাবি, দয়ালের বাড়ি থেকে অভিজিতের প্যান্ট জামা, একটি লোহার রড, নকল বেশ কিছু স্ট্যাম্প প্যাড মেলে। দয়াল মেনে নেন, তিনি ২৫ লক্ষ টাকার একটি জীবনবিমা করেছিলেন। তার একটি প্রিমিয়াম জমাও দিয়েছিলেন। তারপরে নিজেকে মৃত প্রমাণ করে মৃত্যুকালীন সুবিধা নেওয়ার জন্যই খুনের পরিকল্পনা করেন তিনি।

মামলার সরকারি আইনজীবী অরূপ ভট্টাচার্য জানান, আদালতে এলআইসির আধিকারিকেরা-সহ মোট ৩৬ জন সাক্ষ্য দেন। প্রমাণ হয়ে যায়, বিমার মোটা অঙ্কের মৃত্যুকালীন সুবিধা নিতেই খুন করা হয়। তবে এই মামলার আর এক অভিযুক্ত, দয়ালের ছেলে দেবজ্যোতি মজুমদার এখনও ফেরার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement