—প্রতীকী ছবি।
কাছাকাছি কোনও জায়গা থেকে ঘুরিয়ে আনার কথা বলে নিজের আট মাসের শিশুকে কোলে করে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বাবা। তার কিছু ক্ষণ পরেই বাড়ির পাশের জঙ্গল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ওই শিশুকে। ইট দিয়ে জোরে আঘাত করা হয়েছে তার মাথায়। তড়িঘড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। পশ্চিম বর্ধমানের অণ্ডাল থানার বহুলা মতি বাজারের নিউ কোয়ার্টার এলাকার ঘটনা। নিজের সন্তানকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত বাবাকে।
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম অজয় ভুঁইয়া। তিনি পেশায় দিনমজুর। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) কুমার গৌতম বলেন, ‘‘শিশুটিকে তার বাবাই খুন করেছে বলে অভিযোগ পেয়েছি আমরা। গ্রেফতারও করা হয়েছে বাবাকে। আদালতে পাঠিয়ে তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আমরা তদন্ত করব। ঠিক কী ঘটেছে, তা জানার চেষ্টা করব বাবার কাছ থেকে। এটা কি ঠান্ডা মাথায় খুন না কি অন্য কিছু, সব পরিষ্কার হবে ময়নাতদন্তের পর।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, অজয় ও তাঁর স্ত্রী মমতা ভুঁইয়ার মধ্যে অনেক দিন ধরেই দাম্পত্যকলহ চলছিল। তার সূত্রপাতও ওই আট মাসের শিশুসন্তানকে নিয়েই। অজয়ের দাবি, শিশুটি তাঁর নয়, অন্য কারও। রোজকার অশান্তির জেরে সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন মমতা। সম্প্রতি নিজেই গিয়ে স্ত্রী-সন্তানকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন অজয়। তার পরেই এই ঘটনা।
পরিবার সূত্রেও জানা গিয়েছে, স্ত্রী বাড়ি ফিরে আসার পর আবার সমস্যা দেখা দেয় দু’জনের মধ্যে। বুধবার সকালে ছেলেকে কোলে করে বাড়ি থেকে বেরোন অজয়। ছেলেকে কিছু ক্ষণের জন্য ঘুরিয়ে আনতে চান বলেই জানান স্ত্রীকে। অনেক ক্ষণ হয়ে গেলেও স্বামী ছেলেকে নিয়ে ফিরে না আসায় সন্দেহ হয় মমতার। বিষয়টি জানাজানিও হয় পাড়ায়। এর কিছু ক্ষণ পরেই মমতাকে এক পড়শি জানান, তাঁর স্বামীকে বাড়ির পাশের জঙ্গলে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। তা শুনেই সেখানে ছুটে যান মমতা। সেখানে গিয়ে স্বামীর কাছে ছেলের কথা জানতে চান তিনি। কিন্তু অভিযোগ, অজয় তাঁকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। এর পর বধূই প্রতিবেশীদের ডেকে আনেন জঙ্গলে। পরে সেখান থেকেই গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার হয় শিশুটি। সঙ্গেই সঙ্গেই তাকে রানিগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
বধূর পরিবারের দাবি, ছেলেকে নিজের সন্তান বলে স্বীকারই করতেন না অজয়। খুনের পরিকল্পনা করেই মা-ছেলেকে বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। পুলিশ সূত্রে খবর, পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে অজয়কে গ্রেফতার করা হলেও ঠিক কী ঘটেছে, এখনও স্পষ্ট নয়। এখনও মুখই খোলেননি অজয়।