তোরণে সেজেছে শহর, রবিবার। নিজস্ব চিত্র
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শহরে আসার আগে শুক্রবার রাতে জোড়া ‘দুষ্কর্ম’ ঘটে বর্ধমানে। দোকানে বোমা ছোড়ার ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করা হলেও অন্য ঘটনায় পুলিশকর্মীর ‘ছিনতাই’ হওয়া সার্ভিস রিভলভারটির খোঁজ মেলেনি রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত। ওই জোড়া ঘটনায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে শহরবাসী প্রশ্ন তুলেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে আজ, সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বর্ধমানে আসার আগে নিরাপত্তা আরও আঁটোসাঁটো করছে জেলা পুলিশ।
আজ, দুপুর ২টো থেকে সংস্কৃত লোকমঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের ধারণা, তিনি সম্ভবত নবান্ন থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বর্ধমানে পৌঁছবেন। বৈঠক শেষ করে যাবেন কানাইনাটশালে। মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের আগে পুরো রাস্তা, সভামঞ্চ ও কানাইনাটশালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে বর্ধমানে আসেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) রাকেশ মিশ্র-সহ অন্য কর্তারা। টাউন হলে জেলা পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে বিকেল ৪টে থেকে দীর্ঘক্ষণ বৈঠকও হয়।
জেলা পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার সীমানা জামালপুরের ঝাপানডাঙা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জনবহুল জায়গায় ব্যারিকেড থাকবে। শক্তিগড়ের কাছ থেকে বর্ধমান শহর পর্যন্ত বিভিন্ন মোড়ে মোতায়েন থাকবেন যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশকর্মী। আর সভামঞ্চ ও কানাইনাটশাল বাংলোটিকে ঘিরে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, আইজি-র নেতৃত্বে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হচ্ছে। আইজি ছাড়াও ছ’জন আইপিএস অফিসার থাকবেন। দশ জন ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিক থাকবেন। এ ছাড়াও ইনস্পেক্টর, সাব ইনস্পেক্টর-সহ অন্য পুলিশকর্মী মিলিয়ে চারশো জনের মতো রাস্তায় থাকবেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন আটশো জন সিভিক ভলান্টিয়ারও। কানাইনাটশালে প্রায় ২৫ ফুট উঁচু নীল-সাদা কাপড়ের ‘পাঁচিল’ তৈরি করা হয়েছে। ফলে পাশের বাড়ির দোতলার ছাদ থেকেও কানাইনাটশালের ভিতরে নজর রাখা যাবে না।
জেলার এক পুলিশকর্তা জানান, নিরাপত্তায় জোর দিতে গিয়ে জনজীবন যাতে বিপর্যস্ত হয়ে না হয়, তা-ও দেখা হচ্ছে। প্রথম দিকে যান নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়া হবে না। তবে শহরে মুখ্যমন্ত্রী ঢোকার পরে ও সভার শেষে তা নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রতিটি মোড়ে দলীয় কর্মীদের থাকার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রবিবার শহর ঘুরে দেখা যায়, উল্লাস মোড় থেকে কার্জন গেট, সেখান থেকে স্টেশনের মোড়-নবাবহাটের মুখ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের ফ্লেক্স টাঙানো রয়েছে। কার্জন গেটের সামনে থেকে সংস্কৃত লোকমঞ্চ পর্যন্ত গুমটিগুলিকে নীল-সাদা কাপড় আর উন্নয়নমূলক ফ্লেক্সে ঢেকে ফেলা হয়েছে। জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি দেবু টুডুর দাবি, “৪০টির মতো প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন দিদি।’’
এ দিকে, বাজেপ্রতাপপুরের চারখাম্বায় অবরোধ তুলতে গিয়ে বর্ধমান সদর থানার অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর (এএসআই) ধীরাজ ঘোষের ‘সার্ভিস রিভলভার’ ছিনতাই হয়। এই ঘটনায় ওই এএসআই-কে জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে ‘সাসপেন্ড’ করা হয়েছে বলে জানা যায়। পুলিশ সুপার বলেন, “সার্ভিস রিভলভারটির খোঁজ চলছে। কারা কারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তা-ও দেখা হচ্ছে।’’ ওই এলাকায় পথবাতির দাবিতে অবরোধ করেন বাসিন্দারা। ডিএসপি (সদর) শৌভিক পাত্র রেলের উড়ালপুলকারী সংস্থা ‘রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড’-কে (আরভিএনএল) চিঠি দিয়ে দ্রুত পথবাতি বসানোর জন্য বলেছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। জেলা পুলিশের কর্তারা মনে করছেন, পথবাতি থাকলে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সার্ভিস রিভলভার ‘ছিনতাইকারী’দের দ্রুত ধরা সম্ভব হত।