মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোট দোরগোড়ায়। তার আগে গোদার মাঠে প্রশাসনিক সভা থেকে বর্ধমানের প্রতি তাঁর টান ও রাজ্য সরকারের প্রকল্পে উন্নতির খতিয়ান তুলে ধরার চেষ্টা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সভা শেষে সে নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা।
গোদার মাঠে এই সভায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এসেছিলেন রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। মঞ্চে ছিলেন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, স্বপন দেবনাথ, মলয় ঘটক, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীরা। ছিলেন বিধায়ক (কাটোয়া) রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের জেলা সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার ও বিশ্বনাথ বাউরি এবং রাজ্যের শীর্ষস্থানীয় আমলারা। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী দুই জেলা মিলিয়ে হাজার কোটিরও বেশি টাকার প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। পূর্ব বর্ধমান জেলায় ৪৯১টি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। যার জন্য খরচ হয়েছে ৩৬৫.৪৫
কোটি টাকা।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে বার বার ফিরে আসে ‘কন্যাশ্রী’দের কথা। তাঁর কথায়, “অনেকে বলেন, আমরা না কি কিছু করি না। আমাদের মতো এত উন্নয়ন আর কেউ করতে
পারেনি। শুরু করেছিলাম কন্যাশ্রী থেকে। কন্যাশ্রীরা আমার গর্ব।” তিনি আরও বলেন, “আগে বাবা-মায়েরা ভাবতেন, মেয়েকে খাওয়াব কী করে, পড়াব কী করে! এখন মা-বাবারা বুঝছেন তো, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, ঐক্যশ্রী, মেধাশ্রী করে দিয়েছি।’’ এ দিন তিনি জানান, দুয়ারে সরকার, সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীতে যাঁরা আবেদন করেছিলেন, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ছ’টি প্রকল্পের সুবিধা পেতে চলেছেন তাঁদের অনেকেই। এ দিনের সভার মাধ্যমে পূর্ব বর্ধমানে চার লক্ষের বেশি ও পশ্চিম বর্ধমানে এক লক্ষ ৬০ হাজার লোক পরিষেবা পাচ্ছেন।
পরিযায়ী শ্রমিকদের উন্নয়নে রাজ্য সরকার বোর্ড তৈরি করেছে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ‘‘বিপদে পড়লে আমরা সাহায্য করব। পরিবারকে বলেছি, যোগাযোগ রাখবেন।” একই সঙ্গে পরিযায়ী শ্রমিকদের এ রাজ্যে থেকে কাজ করার আহ্বানও জানান। ভোটের সময় ভোটটাও দিতে বলেন। বীরভূমের দেউচা খনি, পানাগড়ে শিল্পতালুক, একাধিক আর্থিক ও শিল্প করিডর তৈরির কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, অনেক চাকরি হবে।
সম্প্রতি নিম্নচাপের জেরে বৃষ্টিতে অনেক জমিতে জল জমে ধান নষ্ট হয়ে যায়। চাষিদের চিন্তা করতে বারণ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা তথা পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে তিনি বিষয়টি দেখতে বলেছেন। তিনি এই জেলা নিয়ে গর্ব করেন জানিয়ে বলেন, “বর্ধমান জেলা শস্যের ভান্ডার।’’
বিজেপির রাজ্যের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর পুরনো অভিযোগ শুনে মানুষ ক্লান্ত। অপরিকল্পত ব্যয়, এক তহবিলের টাকা অন্য তহবিলে সরানো, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি কারণে বাংলার মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। মানুষ এ সব বোঝেন।’’ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা) আশিস পালের অভিযোগ, “ভোটের আগে বর্ধমানের কথা তুললেও বাস্তবে তিনি বর্ধমানের জন্য কিছুই করেননি।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেনের দাবি, “এত দুর্নীতি থাকার পরেও কী ভাবে ভাঁওতার গল্প শোনাচ্ছেন, এটাই আশ্চর্যের! মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্য জনজীবনের কষ্ট আর সরকারি টাকার অপব্যয় ছাড়া কিছু হয়নি।”