প্রতিকূলতাই বাড়িয়েছে জেদ, সাফল্য প্রীতমদের

এক জন ছোট থেকে সংসার টানতে বাবাকে অমানুষিক প্ররিশ্রম করতে দেখেছেন। আর এক জনের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে পড়াশোনা করার জেদ দেখেছেন পরিজনেরা। মাধ্যমিকের ফল হাসি ফুটিয়েছে দু’জনেরই পরিবারের মুখে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৬ ০৩:০৬
Share:

বাবার কোলে প্রীতম।নিজস্ব চিত্র।

এক জন ছোট থেকে সংসার টানতে বাবাকে অমানুষিক প্ররিশ্রম করতে দেখেছেন। আর এক জনের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে পড়াশোনা করার জেদ দেখেছেন পরিজনেরা। মাধ্যমিকের ফল হাসি ফুটিয়েছে দু’জনেরই পরিবারের মুখে।

Advertisement

নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে ছোট থেকে বাবা-মাকে অমানুষিক পরিশ্রম করতে দেখেছে আসানসোলের ইস্টার্ন রেল স্কুলের ছাত্র, হিলভিউয়ের বাসিন্দা অনুপম দাস। আর তখন থেকেউ অভাব ঘোচানোর সংকল্পে শক্ত হয়েছে চোয়াল। অনুপমের বাবা অশোক দাস পেশায় অটো চালক। গত বাইশ বছর ধরে প্রতিদিন সকালে স্কুলের পড়ুয়াদের আনা-নেওয়া করছেন। মাস ফুরোলে রোজগার বড়জোর পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু দুই ছেলেকে মানুষ করার লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন। তাঁদের এই ইচ্ছে জেদ বাড়িয়ে তুলেছে অনুপমের। মাধ্যমিকে ৬৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। প্রথম পছন্দ ইঞ্জিনিয়ারিং। না হলে অ্যাস্ট্রো ফিজিক্স নিয়ে পড়তে চায় অনুপম।

অশোকবাবু জানান, যে কোনও মূল্যে ছেলের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করতে চান। সরকারের কাছে ইতিমধ্যে সাহায্যের আবেদন করেছেন। তিনি জানান, এত দিন ইস্টার্ন রেল স্কুলের তরফে ছেলেকে প্রতি মাসে ৪০০ টাকা করে সাহায্য করা হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকে এই স্কুলেই পড়াতে চান ছেলেকে। কিন্তু আর সাহায্য মিলবে কি না জানা নেই। অশোকবাবুরা জানান, প্রতিবেশী তথা পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের প্রাক্তন চিকিৎসক বিশ্বনাথ মাজি অনুপমকে অনেক সাহায্য করেছেন। বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘এই রকম মেধা হারিয়ে যেতে দেওয়া যায় না। অনেককেই ওর জন্য কিছু করার আবেদন জানিয়েছি।’’ অনুপমের স্কুলের শিক্ষক বিশ্বনাথ মিত্র জানান, তাঁরা সবাই সাধ্যমতো পাশে থাকার চেষ্টা করছেন।

Advertisement

অনুপম। নিজস্ব চিত্র।

দুর্গাপুর বিদ্যাসাগর মডেল হাইস্কুলের ছাত্র প্রীতম চক্রবর্তী দেড় বছর বয়স থেকে স্নায়ুর জটিল রোগে আক্রান্ত। হাঁটা তো দূর, সোজা হয়ে দাঁড়াতেও সমস্যা। স্নানে যাওয়া থেকে স্কুলের ক্লাসরুমে পৌঁছনো, মা-বাবার কোলই ছিল ভরসা। তবে কোনও কিছুই বাধা হয়নি প্রীতমের কাছে। এ বার মাধ্যমিকে সে পেয়েছে ৬২৭। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুচিন্ত্য চট্টরাজ বললেন, ‘‘অসুস্থতাই জেদ বাড়িয়েছে প্রীতমের। ভবিষ্যতে আরও ভাল ফল করবে। ওকে নিয়ে আমরা গর্বিত। সব সময়ে ওর সঙ্গে আছি।’’

ছেলের চিকিৎসার জন্য সারা দেশে ঘুরেছেন বলে জানান প্রীতমের বাবা-মা। তাতে অনেক সময়ে ঠিক মতো ক্লাস করা হয়নি। কিন্তু পরীক্ষায় সমস্যা হয়নি। প্রীতম বড় হয়ে বিজ্ঞানী হতে চায়। অবসরে প্রকৃতির নানা ছবি আঁকতে ভালবাসে। হাতের কাছে বৈদ্যুতিক সামগ্রী কিছু পেলেই নতুন কিছু তৈরির চেষ্টা চলে।

প্রীতমের বাবা, বিএসএনএলের কর্মী কাজলবাবু জানান, ২০১৪ সালে অস্ত্রোপচারের পরে এখন একটু একটু করে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। চিকিৎসকেরা আশ্বাস দিয়েছেন, ছেলেনিয়মিত চিকিৎসায় ভাল হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘‘ও যত দূর পড়তে চাইবে, পড়াব।’’ মা বেণুদেবী বলেন, ‘‘স্কুলের শিক্ষকেরা ছেলেকে নানা ভাবে সাহায্য করেছেন। একতলায় ক্লাসের ব্যবস্থা করেছেন। আমরা কৃতজ্ঞ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement