গ্রামে টহল। নিজস্ব চিত্র
দু’পক্ষের অশান্তিতে এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী-সহ দু’জন জখম হয়েছেন। মঙ্গলবার দুর্গাপুরের লাউদোহা (ফরিদপুর) থানার লবনাপাড়া গ্রামের ঘটনা। পুলিশের বড় বাহিনী গ্রামে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হাসপাতালেই পাঁজরে চোট পাওয়া শেখ আরমান নামে ওই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর ‘রাইটার’ দিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা করানো হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের’ জেরেই এই ঘটনা। তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা বিষয়টিকে ‘গ্রামের অশান্তি’ বলে দাবি করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত সোমবার রাতে। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনের দেওয়াল লিখনকে কেন্দ্র করে এলাকার পরিচিত দু’দল তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে অশান্তি বাধে। মঙ্গলবার একশো দিনের প্রকল্পের জন্য নলকূপ থেকে জল নেওয়ার সময়ে দু’টি পাড়ার মহিলাদের মধ্যে বচসা শুরু হয়। এর পরেই অশান্তি আরও বাড়ে। প্রকল্পের সুপারভাইজ়ারকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এর পরেই দু’পক্ষ পরস্পরের দিকে রড, লাঠি হাতে তেড়ে যায় বলে দাবি। এ সময়ে কেউ কুড়ুল ছুড়লে, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী শেখ আরমানের পাঁজরে লাগে। তার দাদা, তৃণমূল নেতা জসিমুদ্দিন মণ্ডলও জখম হন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। দু’জনকেই প্রথমে লাউদোহা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরে, আরমানকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই তার পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। আপাতত দুই জখমের অবস্থাই স্থিতিশীল, জানান চিকিৎসকেরা।
এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, তৃণমূল নেতা জসিমুদ্দিনের অনুগামীদের সঙ্গে ইনসান আলির অনুগামীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। জসিমুদ্দিন ও তাঁর অনুগামীদের দাবি, এলাকায় কর্তৃত্ব জাহির করতেই অশান্তি ছড়াচ্ছেন ইনসান ও তাঁর অনুগামীরা। যদিও ইনসান ও তাঁর অনুগামীদের পাল্টা অভিযোগ, একশো দিনের কাজের সুপারভাইজ়ারকে মারধর করা হয়েছে। বিজেপি ছেড়ে জসিমুদ্দিনের লোকজন ফের তৃণমূলে এসে অশান্তি ছড়াচ্ছেন।
সুপারভাইজ়ার হাসিবুল মল্লিকের অভিযোগ, “জসিমুদ্দিনরা তিন ভাই মিলে আমাকে মারধর করে। জামাকাপড় ছিঁড়ে দেয়।” হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে জসিমুদ্দিন বলেন, “মিথ্যা অভিযোগ। একশো দিনের কাজ নিয়ে গ্রামে কারও কোনও অভিযোগ নেই।”
এ দিকে, বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। দলের জেলা মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জিতেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তৃণমূলের অশান্তির মধ্যে পড়ে সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ। এ বার এদের হাত থেকে ছাড় পেল না মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীও।” যদিও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ (খাদ্য) সুজিত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “জল নেওয়াকে কেন্দ্র করে গ্রামে অশান্তি হয়। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।”
রাত পর্যন্ত কোনও পক্ষই লিখিত অভিযোগ করেনি। তবে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে লাউদোহা থানা।