ঘটনার দিন পুলিশের কাছে ঠিক কী অভিযোগ করেছিলেন— বারবার প্রশ্ন করা হলেও আদলতে সে কথা মনে করে বলতে পারলেন না রবিন কাজি হত্যা মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী প্রার্থনা মণ্ডল। কিন্তু পুলিশ ও আদালতের কাছে দেওয়া প্রার্থনাবাবুর লিখিত বয়ান তুলে ধরে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী শেখর কুণ্ডু জেরা করলেন মঙ্গলবার। এ দিন অবশ্য শুনানি শেষ করা যায়নি। দুপুর দেড়টা নাগাদ শুনানি মুলতুবি করে দেন আসানসোলের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক (২) সুনির্মল দত্ত। আজ, বুধবার ফের এই মামলার শুনানি হবে।
রবিন কাজি হত্যা মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী প্রার্থনা মণ্ডলকে মঙ্গলবার এজলাসে হাজির করেন সরকার পক্ষের আইনজীবী বিনয়ানন্দ চট্টোপাধ্যায়। সে দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে তাঁর কাছে বিশদে জানতে চাওয়া হয়। সাক্ষীর বয়ান নথিভুক্ত করা শেষ হলে বিচারক তাঁর কাছে জানতে চান, খুনের ঘটনায় যে অভিযুক্তদের আদালত কক্ষে হাজির করা হয়েছে তাদের মধ্যে কারা সে দিন ঘটনাস্থলে ছিলেন। সাক্ষী অভিযুক্তদের দেখিয়ে জানান, ঘটনার দিন শুধু মনোজ দত্ত ছাড়া বাকি সবাইকেই তিনি ঘটনাস্থলে দেখেছেন।
২০১১ সালের ৪ এপ্রিল বিধানসভা ভোটের দিন কয়েক আগে জামুড়িয়ার বাড়ুল গ্রামে প্রচারে গিয়ে খুন হন তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের নেতা রবিন কাজি। ঘটনার সময়ে তাঁর সঙ্গে ছিলেন জামুড়িয়ার তৃণমূল প্রার্থী প্রভাত চট্টোপাধ্যায়। এই ঘটনায় সিপিএমের জামুড়িয়া জোনাল কমিটির তৎকালীন সম্পাদক মনোজ দত্ত-সহ ২৩ জন সিপিএম কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। মূল অভিযুক্ত দিনু বাউড়ি এখনও জেলে রয়েছে। বাকিরা জামিনে মুক্ত।
এই মামলার প্রধান সাক্ষী প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের সাক্ষ্য ও জেরার পর্ব আগেই শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার দ্বিতীয় সাক্ষীকে আদালতে হাজির করানো হয়। অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী শেখর কুণ্ডু সাক্ষীর কাছে জানতে চান, সে দিনের ঘটনা নিয়ে তিনি কখনও বিচারকের সামনে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন কি না। সাক্ষী সম্মতি জানান। এর পরে অতিরিক্ত দায়রা বিচারক (২) সুনির্মল দত্ত সাক্ষীর গোপন জবানবন্দির বয়ানটি বন্ধ খাম থেকে বের করেন।
শেখরবাবু এর পরে আদালতে জানান, ঘটনার দিন এক জন মত্ত ব্যক্তি তৃণমূলের প্রচারে ঢুকে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছিল। তাকে সরিয়ে দিতে গিয়েই রবিন কাজির সঙ্গে বিবাদ শুরু হয়। পুলিশের কাছে প্রার্থনাবাবু এমনই অভিযোগ করেছেন। যদিও এ দিন বিচরকের সামনে তিনি বারবার দাবি করেন, পুলিশ বা আদালতের কাছে ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি কী বলেছেন, তা তাঁর মনে নেই। পরে শেখরবাবু ফের সাক্ষীকে প্রশ্ন করেন, পুলিশ রবিন কাজি হত্যার যে বিবরণ লিখেছে তা তিনি জানেন কি না। সাক্ষী বলেন, ‘‘আমি জানি না।’’ ইতিমধ্যে ঘড়ির কাঁটা দেড়টার ঘরে পৌঁছতেই বিচারক এ দিনের মতো শুনানি মুলতুবি করেন।