সজাগ: বর্ধমানের সাধনপুরের গণনাকেন্দ্রে। ছবি: উদিত সিংহ
এ বারের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিটি বুথে ইভিএমের সঙ্গেই ছিল ‘ভেরিফায়েব্ল পেপার অডিট ট্রেল’ (ভিভিপ্যাট)। ভোট দেওয়া মাত্র ওই যন্ত্রে কোন দলকে ভোট দেওয়া হয়েছে, তার ছাপানো কাগজ (অনেকটা এটিএম-কাগজের মত) জমা হয়েছে। ইভিএমের সঙ্গে ভিভিপ্যাটও ‘স্ট্রং রুমে’ বন্দি। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ইভিএম গণনার শেষে প্রতিটি বিধানসভার মধ্যে লটারি করে ৫টি করে বুথ বেছে নেওয়া হবে। পর্যবেক্ষক, প্রার্থী বা তাঁর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার লটারি করবেন। ওই পাঁচটি ভিভিপ্যাট যন্ত্রের ভিতর পড়ে থাকা কাগজ বের করে গোনা হবে।
কমিশনের এক আধিকারিক বলেন, “ইভিএম আর ভিভিপ্যাটের গণনা পাশাপাশি রেখে দেখা হবে ঠিক আছে কি না। যদি কোনও কারণে দু’টি যন্ত্রের গণনা এক না হয়, তখন ফের ভিভিপ্যাট গোনা হবে। ফের একই ছবি উঠে এলে ভিভিপ্যাটের গণনাই চূড়ান্ত ধরা হবে।’’
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ‘মক পোল’ করতে গিয়ে ভুল হয়েছে অথবা প্রিসাইডিং অফিসার ‘মক পোল’ করতে ভুলে গিয়েছেন এমন ইভিএমের খোঁজ মিললে, সে ক্ষেত্রে ওই সব বুথে ভিভিপ্যাট গোনা হবে। এ ছাড়া গণনার সময় ইভিএম খুলছে না বা সংখ্যার তারতম্য হচ্ছে দেখলে ভিভিপ্যাটে ভরসা রাখবেন রির্টানিং অফিসারেরা। পূর্ব বর্ধমানের দুটি লোকসভা কেন্দ্রেরই গণনা হচ্ছে বর্ধমান শহরে। বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের ১১৯৩টি বুথের গণনা হবে সাধনপুরের এমবিসি পলিটেকনিক কলেজে আর বর্ধমান-দুর্গাপুরের ২০০৬টি বুথের গণনা হবে গোলাপবাগের কাছে ইউআইটিতে। এই দুই কেন্দ্রেই বাধ্যতামূলক ভাবে প্রতিটি বিধানসভায় ৫টি করে অর্থাৎ ৩৫টি বুথের ভিভিপ্যাট গোনা হবে। কমিশনের দাবি, ফল বের হতে এ বার রাত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলাশাসক দফতরের এক প্রবীণ করণিক বলেন, “আমাদের ব্যালট পেপার গোনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। একটি বুথে গড়ে এক হাজার ভোটার থাকে। চার জন কর্মীর সাহায্যে ব্যালট বার করা, বাছাই করা, বান্ডিল করা নিয়ে গড়ে ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘন্টা সময় লাগত। তবে ভিভিপ্যাট যন্ত্রের কাগজ গুনতে তুলনামূলক ভাবে বেশি সময় লাগবে মনে হচ্ছে।’’ কাটোয়ার এক কর্মীর কথায়, “ব্যালট কাগজের তৈরি হওয়ায় তাড়াতাড়ি গোনার সুযোগ ছিল। কিন্তু ভিভিপ্যাটের কাগজ এটিএম থেকে বেরনো কাগজের মতো। তাড়াতাড়ি করতে গেলেই একটা কাগজের সঙ্গে অন্যটি লেগে বা ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ, ভিভিপ্যাটের ১০x৫.৬ সেন্টিমিটার কাগজ গুনতে কোনও মতেই জলে আঙুল ভেজানো যাবে না। প্রতিটি বান্ডিলে ২৫টি করে ভিভিপ্যাটের কাগজ থাকবে।
ভিভিপ্যাট গণনার জন্যে আলাদা করে ৫৬ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে কমিশন। এ ছাড়াও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এআরও টেবিলে থাকা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদমর্যাদার আধিকারিকরা। এমনই এক আধিকারিকের দাবি, “এক-একটি লোকসভায় ৫ রাউন্ড করে ভিভিপ্যাট গোনা হবে। মোট ৭ রাউন্ড গণনা হবে। প্রতি রাউন্ড গুনতে এক থেকে দেড় ঘন্টা লাগবে বলে মনে করছি।’’ গণনাকেন্দ্রে প্রতিটি বিধানসভার একটি ঘরে পাঁচ দিকে ঢাকা পৃথক একটি ‘কাউন্টার’ তৈরি করা হয়েছে সেখানেই ভিভিপ্যাট গণনা হবে। প্রতিটি ‘কাউন্টারে’ চার জন করে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী থাকবেন। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মতো আমরা সব দিক থেকেই প্রস্তুত রয়েছি।’’