New education system

শিক্ষায় ‘আপস’, প্রশ্নে স্কুলের পুনর্নবীকরণ 

বেশ কয়েক বছর ধরে কাটোয়া মহকুমায় বহু উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলই শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব রয়েছে।

Advertisement

প্রণব দেবনাথ

কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪ ০৮:৩৬
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

এ যেন মগের মুলুক।

Advertisement

স্কুলে সব বিষয় পড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছে কিনা, তা দেখেই উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলির পুনর্নবীকরণ করার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না বলে শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। জানা যাচ্ছে, সব বিষয় পড়ানোর মতো শিক্ষক-শিক্ষিকা না থাকলেও কাটোয়া মহকুমায় বহু উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের পুনর্নবীকরণ হয়ে গিয়েছে। শিক্ষামহলের আশঙ্কা, এর ফলে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাবে।

বেশ কয়েক বছর ধরে কাটোয়া মহকুমায় বহু উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলই শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব রয়েছে। কাটোয়া ও দাঁইহাট শহরে সমস্যা তেমন না হলেও, গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ স্কুলে প্রয়োজনীয় শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই বলে দাবি সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলির। কিন্তু, তা সত্ত্বেও প্রতি দু’বছর অন্তর উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলির পুনর্নবিকরণ হয়ে যাচ্ছে বলে শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। এতে স্কুলগুলির মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকছে ঠিকই, তবে পঠন-পাঠন কার্যত শিকেয় উঠেছে।

Advertisement

সরকারি নিয়ম মোতাবেক, যে তারিখে কোনও একটি স্কুল উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হয়, প্রতি দু’বছর অন্তর সেই তারিখের মধ্যেই সংশ্লিষ্ট স্কুলের পুনর্নবীকরণ করাতে হয়। সে ক্ষেত্রে অনুমোদিত বিষয়গুলির শিক্ষক-শিক্ষিকা থাকা বাধ্যতামূলক। না হলে স্কুলগুলি উচ্চ মাধ্যমিকের মর্যাদা হারায়। শিক্ষকদের একাংশের মতে, গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ স্কুলেই সব বিষয়ের পর্যাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। তা সত্ত্বেও সেগুলির পুনর্নবীকরণ হচ্ছে। এই ঘটনায় শিক্ষার কঙ্কালসার চেহারা প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসছে বলে মনে করছেন শিক্ষকদের একাংশই। বিষয়টি জানাজানি হতেই গ্রামাঞ্চলের পড়ুয়ারা অনেকেই আর তাদের এলাকার উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হতে চাইছে না। অবস্থাসম্পন্ন বাড়ির পড়ুয়ারা শহরের স্কুলে ভর্তি হতে চাইছে। সমস্যার কথা কার্যত মেনে নিয়েছে কিছু স্কুলের কর্তৃপক্ষও।

শিক্ষা দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া মহকুমায় ১২৩টি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষকের অভাব রয়েছে ৭০-৮০টি স্কুলে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে শুরু করে শরীরশিক্ষা, এমনকি কোনও কোন স্কুলে বাংলা ও ইংরেজির শিক্ষকও নেই। স্কুলগুলি কোনওরকমে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের পড়াশোনা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। মঙ্গলকোট থেকে শুরু করে কেতুগ্রাম ১-২ এবং কাটোয়া ১-২ ব্লকের অনেক স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকের পড়াশোনা কার্যত শিকেয় উঠেছে। শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, পূর্ব গোপালপুর এসএমপি বিদ্যামন্দিরে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে কার্যত কোনও শিক্ষকই নেই বললেই চলে। একই অবস্থা আউরিয়া চারুচন্দ্র স্কুলেও।

পূর্ব গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা ধানু লাহা বলেন, “আমাদের গ্রামের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলটিতে প্রায় হাজার খানেক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। অথচ, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে দীর্ঘদিন ধরেই কোনও শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। তাই বাধ্য হয়েই পাশের একটি স্কুলে গ্রামের ছেলেমেয়েরা ভর্তি হচ্ছে। আবার গ্রামের একটু অবস্থাসম্পন্ন বাসিন্দারা ছেলেমেয়েদের কাটোয়া শহরের স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। তারা বাড়ি ভাড়া করে থাকতে শুরু করেছে।”

কেতুগ্রামের বাসিন্দা দিবাকর রায়ের কথায়, “শুধু আমাদের গ্রামই নয়, পাশাপাশি এলাকার প্রতিটি স্কুলেই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়ানোর শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। অথচ, নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রতি দু’বছর অন্তর স্কুলগুলির পুনর্নবীকরণ হয়ে যাচ্ছে। গ্রামের বহু স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস হতে বসেছে। সরকারের উচিত স্কুলগুলিতে অবিলম্বে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করা।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মঙ্গলকোটের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “আমাদের মতো অনেক স্কুলেই বাংলা, ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক নেই। রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞানের কথা ছেড়েই দিলাম। কিন্তু, তা সত্ত্বেও মর্যাদা ধরে রাখার জন্য এক প্রকার চালাকি করেই স্কুলগুলির উচ্চ মাধ্যমিকের পুনর্নবীকরণ হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক হিসেবে বিষয়টি আমাদেরও খারাপ লাগছে।”

এ বিষয়ে সহকারী স্কুল পরিদর্শক অনুপ চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, “এ কথা সত্যি যে, দুই শহর ছাড়া কাটোয়া মহকুমার গ্রামাঞ্চলের স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার খুবই অভাব রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আগেই শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি জানানো হয়েছে। স্কুলগুলির পুনর্নবীকরণের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement