বাঁ দিকে, খোকন দাস ও ডান দিকে, অরূপ দাসের মিছিল, বর্ধমান শহরে। নিজস্ব চিত্র
একই সময়ে শহরের দু’দিকে দু’টি মিছিল। দু’টিই জাতীয় নাগরিক পঞ্জি, নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে। একটি তৃণমূলের ঘোষিত, আর একটি ‘অরাজনৈতিক’ সংগঠনের। কার্যত দু’টি মিছিলে ভাগ হয়ে গেলেন বর্ধমানের বিদায়ী কাউন্সিলরেরা। দেখা দিয়েছে চাপানউতোরও।
বিরোধীদের দাবি, শুক্রবার বিকেলের এই দুই মিছিল আসলে পুরভোটের আগে বর্ধমান শহরে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রকাশ। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বেরও একাংশের দাবি, দু’টি মিছিল এক দিনে না হলেই ভাল হত। তবে দলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের দাবি, “শহরের দু’প্রান্তে দু’টি মিছিল হয়েছে, ভালই তো। একটি দলের ঘোষিত কর্মসূচি। আর একটি উদ্বাস্তু মানুষদের জন্য মিছিল।’’
কালনা গেট লাগোয়া এলাকায় দলের ঘোষিত মিছিলেন হোতা ছিলেন বর্ধমান শহর তৃণমূলের সভাপতি অরূপ দাস। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার প্রাক্তন সাংসদ মমতাজ সঙ্ঘমিতা, বিদায়ী উপপুরপ্রধান খোন্দেকার শহিদুল্লাহ, বিদায়ী কাউন্সিলর সৈয়দ মহম্মদ সেলিম, মহম্মদ আলি, জেলা পরিষদের সদস্য নারায়ণ হাজরা চৌধুরী প্রমুখ।
অন্য মিছিলটি হয়, শহরের কেন্দ্রস্থল পুলিশ লাইন থেকে কার্জন গেট পর্যন্ত। এই মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান-ইন কাউন্সিল খোকন দাস। এই মিছিলে পা মেলান বিধায়ক (বর্ধমান দক্ষিণ) রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি দেবু টুডু-সহ বর্ধমান পুরসভার বেশির ভাগ বিদায়ী কাউন্সিল। ‘আমরা নাগরিক’ ব্যানারের মিছিলের চাপে দীর্ঘক্ষণ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল বর্ধমান শহরের জিটি রোড।
শহর সভাপতি অরূপবাবুর দাবি, “দলের ঘোষিত কর্মসূচিকে অমান্য করে অরাজনৈতিক ব্যানারে দলের নেতারা একই দাবিতে রাস্তায় হাঁটলেন। এটা কি খুব ভাল হল? আমাদের বাইরে থেকে লোক আনতে হয়নি। শহরে দলের শক্তিতেই খুব ভাল মিছিল হয়েছে।’’ খোকন দাসের পাল্টা বক্তব্য, “জেলা সভাপতির অনুমোদন নিয়েই মিছিল করেছি। অরাজনৈতিক এই মিছিলে বর্ধমান শহরের ২০-২৫ হাজার মানুষ হেঁটে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। অনেক আগে থেকেই এই মিছিলের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল।’’ জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি), নতুন জনসংখ্যা নিবন্ধন (এনপিআর) বিরোধী এই মিছিলে তৃণমূলের কোনও পতাকা দেখা যায়নি। তবে অনেকে জাতীয় পতাকা হাতে মিছিলে হেঁটেছেন।
বিজেপির জেলা সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দীর কটাক্ষ, ‘‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আর চাপা যাচ্ছে না। মিছিলেই তার প্রমাণ দিল তৃণমূল।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অবশ্য বলেছেন, “এই দুই মিছিলের মাধ্যমে মানুষের কাছে আমাদের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবাদের ভাষা পৌঁছনো গিয়েছে, এটাই
বড় কথা।’’