অন্তঃসত্ত্বা আইনজীবীকে মারধরের অভিযোগে শোরগোল বর্ধমান আদালতে। — প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
মহিলা আইনজীবী এবং তাঁর স্বামী আক্রান্ত ‘পুলিশের লোকের’ হাতে। কিন্তু এ নিয়ে অভিযোগ নিতে চায়নি বর্ধমান থানার পুলিশ। এমনকি, পুলিশে অভিযোগ না-হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দম্পতির চিকিৎসা করেননি। এমনই অভিযোগে বর্ধমান জেলা আদালতে শোরগোল। বিচারের দাবিতে এবং ঘটনার প্রতিবাদে কাজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশন। ‘পেন ডাউন’ কর্মসূচি নিয়েছেন জেলা আদালতের আইনজীবীরা। মঙ্গলবার জেলা জজকে লেখা চিঠিতে বার অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, মারধরের ফলে মহিলা আইনজীবীর গর্ভপাত হয়েছে। এর প্রতিবাদে বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য আইনজীবীরা বুধবার বিচার প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন না। চিঠি দেওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। তবে এ নিয়ে জেলা পুলিশ কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
বর্ধমান আদালত সূত্রে খবর, গত ১৫ মার্চ দোলের দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ আক্রান্ত আইনজীবী ও তাঁর স্বামী জেলখানা মোড় হয়ে বাইকে করে বিজয়রাম হরিনারায়ণপুরে তাঁদের বাড়ি ফিরছিলেন। জেলখানা মোড়ের কাছে একটি বাইক তাঁদের বাইকে ধাক্কা মারে। তখন ওই বাইকচালককে ঠিক করে বাইক চালানোর পরামর্শ দেন আইনজীবীর স্বামী। অভিযোগ, ওই ব্যক্তি নিজেকে ‘পুলিশের লোক’ বলে পরিচয় দিয়ে মহিলা আইনজীবী এবং তাঁর স্বামীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে শুরু করেন। রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয় তাঁদের। তার পরে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় দম্পতিকে। এ নিয়ে অভিযোগ জানাতে পুলিশের দ্বারস্থ হন স্বামী-স্ত্রী। তখন পুলিশ তাঁদের ‘পরামর্শ’ দেয় আগে চিকিৎসা করিয়ে আসতে। হাসপাতালের কাগজ (প্রেসক্রিপশন) না পেলে অভিযোগ নেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেন পুলিশের এক আধিকারিক।
তখন দম্পতি হাসপাতালে যান। কিন্তু সেখানে তাঁদের বলা হয়, পুলিশের ‘নথি’ না পেলে চোট-আঘাতের চিকিৎসা করানো হবে না। বাধ্য হয়ে একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসা করান ওই আইনজীবী এবং তাঁর স্বামী। মহিলা আইনজীবীর দাবি, তিনি অন্তঃসত্ত্বা। তাঁর উপর হামলার কথা পুলিশকে একাধিক বার জানিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ নিষ্ক্রিয় থেকেছে। ওই খবর ছড়িয়ে পড়তেই জেলা আদালতে আইনজীবীরা প্রতিবাদে নামেন। বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরূপ দাস বলেন, ‘‘মহিলা আইনজীবীকে মারধর করা হয়েছে। এ নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। আইনজীবীরা একজোট হয়ে এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’ তিনি জানান, তাঁদের অভিযোগ এবং সিদ্ধান্তের কথা জেলা বিচারককে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নজরে আনারও চেষ্টা করছেন আইনজীবীরা।