চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস কারখানা। ছবি: পাপন চৌধুরী।
পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগ ও বেসরকারি সংস্থা থেকে যন্ত্রাংশ আমদানি বন্ধের দাবি তুলে চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানায় সরব হল সিটু এবং আইএনটিইউসি। শ্রমিক নেতৃত্বের অভিযোগ, কারখানা বেসরকারি করার পথে যাচ্ছে রেল মন্ত্রক। প্রতিবাদে রেল বোর্ডের সদস্যদের হাতে সম্প্রতি স্মারকলিপি দিয়েছেন শ্রমিক নেতৃত্ব। ন্যূনতম যন্ত্রাংশ আমদানির আবেদন জানিয়েছে বিএমএস। কারখানা কর্তৃপক্ষের দাবি, ইঞ্জিন তৈরির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বেসরকারি সংস্থা থেকে যন্ত্রাংশ আমদানি করতে হচ্ছে। তবে সংস্থা বেসরকারিকরণের অভিযোগ ‘গুজব’ বলে জানান তাঁরা।
সিটু এবং আইএনটিইউসি নেতাদের অভিযোগ, চলতি অর্থবর্ষে সংস্থায় ইঞ্জিন তৈরির লক্ষ্যমাত্র পূরণ করতে ইঞ্জিন তৈরির প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের সিংহভাগ বেসরকারি সংস্থা থেকে আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। অথচ, এ সব যন্ত্রাংশ অতীতে চিত্তরঞ্জন কারখানাতেই তৈরি করা হয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, কারখানায় তা তৈরির পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও কেন বাইরে থেকে আমদানি করা হচ্ছে? সিটুর সম্পাদক রাজীব গুপ্ত, আইএনটিইউসি সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ সিংহদের দাবি, ‘‘রেল বোর্ড ও মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তে পরিষ্কার কারখানা ক্রমশ বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার পথ চওড়া করা হচ্ছে।’’ আরএসএস প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন বিএমএসের কারখানা ইউনিটের সভাপতি অমরেন্দ্রকুমার সিংহের দাবি, ‘‘লক্ষ্যপূরণ করতে বেসরকারি সংস্থা থেকে ন্যূনতম যন্ত্রাংশ আমদানি করার আবেদন করেছি। তবে যন্ত্রাংশের গুণমান বজায় রাখতে হবে।’’ এই দাবিতে সম্প্রতি রেল বোর্ডের সদস্যদের হাতে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে বলে জানান তাঁরা।
কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি অর্থবর্ষে সংস্থায় ৭০০ ইঞ্জিন তৈরির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে চিত্তরঞ্জনে ছ’শোটি ও ডানকুনি ইউনিটে একশোটি ইঞ্জিন তৈরি হবে। সে জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের জোগান কী ভাবে হবে, সে বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। তাতে দেখা গিয়েছে, ইঞ্জিন তৈরির জন্য অন্যতম নিউমেটি পাইপিং এবং সেল পেন্টিং প্রয়োজন ২৮০টি, যার মধ্যে ২১০টি বেসরকারি সংস্থা থেকে আমদানি করা হবে। ডব্লুএজি ৯ অশ্বশক্তির ইঞ্জিনের জন্য প্রয়োজনীয় ৬০০টি কেব্ল হার্নেস যন্ত্রাংশ লাগবে। তার মধ্যে ৪৭৫টিই বাইরে থেকে আমদানি করা হবে। আবার এই ইঞ্জিনের জন্য প্রয়োজনীয় ৬০০টি প্যানেল সেটের মধ্যে বাইরে থেকে আনা হচ্ছে ৪২৫টি। একই ভাবে আরও কিছু যন্ত্রাংশ বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে আমদানিরসিদ্ধান্ত হয়েছে।
কারখানার সিনিয়র ডেপুটি জিএম প্রমোদ ক্ষেত্রী বলেন, ‘‘লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য কিছু যন্ত্রাংশ বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে আমদানি করা হচ্ছে।’’ কিন্তু সিটু এবং আইএনটিইউসি নেতাদের দাবি, এই যন্ত্রাংশগুলি এই কারখানাতেই এত দিন তৈরি করা হয়ছে। কারখানায় এই যন্ত্রাংশ আমদানি ও কর্মী নিয়োগের দাবি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। সিটু নেতা রাজীবের দাবি, ‘‘কারখানাকে ক্রমশ ‘অ্যাসেম্বলিং ইউনিট’ করে তোলা হচ্ছে। বছরভর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিই হল, পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগ না করে বেসরকারি সংস্থার কাছে যন্ত্রাংশ নেওয়া।’’ আইএনটিইউসি নেতা ইন্দ্রজিৎ সিংহের অভিযোগ, ‘‘কংগ্রেস সরকার স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুয়োগ করে দিতে দেশি কারিগরি কৌশলে এই কারখানা তৈরি করেছিল। বিজেপি তা ধংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।’’ বিএমএস নেতা অমরেন্দ্রর পাল্টা দাবি, ‘‘সিটু এবং আইএনটিইউসি সবেই রাজনীতি দেখে। কেন্দ্রের চেষ্টাতেইউৎপাদন বেড়েছে।’’