সাংবাদিক সম্মেলন। নিজস্ব চিত্র।
পুনর্বাসনের দাবিতে ডিভিসির তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ‘দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার স্টেশনে’ (ডিটিপিএস) ১ জুন থেকে অনশন শুরু করেছেন ১৭০ জন বস্তিবাসী। পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে শুক্রবার ডিভিসির চেয়ারম্যানকে চিঠি দিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের জয়ী তৃণমূল প্রার্থী কীর্তি আজাদ। সেই চিঠির প্রতিলিপি নিয়ে এ দিন কীর্তির প্রতিনিধিরা গিয়েছিলেন আন্দোলনকারীদের অনশন প্রত্যাহার করার অনুরোধ নিয়ে। কিন্তু তাঁরা জানিয়ে দেন, সাংসদ বা মন্ত্রী গিয়ে সরাসরি তাঁদের আশ্বস্ত না করলে তাঁরা উঠবেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিটিপিএসে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ৮০০ মেগাওয়াটের একটি ‘সুপারক্রিটিক্যাল ইউনিট’ স্থাপন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় জমির জন্য ডিটিপিএস কর্তৃপক্ষ ডিটিপিএস কলোনি, মায়াবাজার-সহ সংলগ্ন এলাকার অবৈধ দখলদারদের এলাকা ফাঁকা করার নোটিস জারি করেছেন। ডিটিপিএসের কোয়ার্টার্সে অবৈধ দখলদারদের তুলতে জল ও বিদ্যুতের সংযোগ ছিন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে সেই সব বাসিন্দারা প্রায় ন’মাস ধরে ‘দুর্গাপুর ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরক্ষা কমিটি’র নেতৃত্বে পুনর্বাসনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। প্রশাসন তাঁদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করছে।
শুক্রবার কীর্তি সাংবাদিক সম্মেলন করে দাবি করেন, পুনর্বাসনের জন্য সরকারি আইন রয়েছে। আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ ও রায় রয়েছে। জল ও বিদ্যুৎ পরিষেবা পাওয়া মৌলিক অধিকার। তিনি বলেন, “ডিটিপিএস কর্তৃপক্ষ নতুন ইউনিট স্থাপন করছেন। এর জেরে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কর্মসংস্থান হবে। একই সঙ্গে ডিটিপিএসের জায়গায় দীর্ঘ দিন ধরে বসবাসকারীদের উপযুক্ত পুনর্বাসন দিতে হবে। তাই দেশের আইন ও আদালতের রায় উল্লেখ করে দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার আর্জি জানিয়ে ডিভিসির চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছি।” আন্দোলনকারীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে অবিলম্বে অনশন প্রত্যাহারের আর্জি জানান কীর্তি। তবে কমিটির তরফে অরিন্দম নায়েক বলেন, “সাংসদ (কীর্তি) আমাদের কথা ভেবেছেন। আমরা খুশি। কিন্তু তিনি বা রাজ্যের মন্ত্রী নিজে এসে আমাদের আশ্বস্ত না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।” কীর্তি জানান, তিনি কলকাতায় দলীয় কাজে গিয়েছেন। ফিরে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করবেন।
পুনর্বাসনের প্রশ্নে ডিভিসির চেয়ারম্যান এস সুরেশ কুমার সম্প্রতি দুর্গাপুরে এসে জানিয়ে দিয়েছেন, পুনর্বাসনের বিষয়ে তাঁরা আপাতত কোনও চিন্তাভাবনা করছেন না। এ প্রসঙ্গে কীর্তি বলেন, “তা হলে তিনি আদালত অবমাননার দায়ে পড়বেন। আমি আদালতের দ্বারস্থ হব। নিশ্চয়ই তিনি তেমন পরিস্থিতি তৈরি করবেন না।” চেষ্টা করেও চেয়ারম্যানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে কীর্তির এই মন্তব্য প্রসঙ্গে বিজেপির অন্যতম রাজ্য সম্পাদক তথা দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই বলেন, “আমরা প্রথম দিন থেকে বলে আসছি পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ হবে না। রাজ্য সরকার জমি দেবে। কেন্দ্র বাড়ি বানিয়ে দেবে। সাংসদ আর নতুন কী বলবেন। বরং, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে জমির ব্যবস্থা করুন। শিল্প হোক যাতে বেকারদের কর্মসংস্থান হয়।” যদিও কীর্তির দাবি, ডিভিসির হাতে যে অব্যবহৃত জমি আছে, সেখানেই পুনর্বাসনের ব্যবস্থা
করা সম্ভব।