Kanchanjunga Express Accident

ফের ট্রেন দুর্ঘটনা উস্কে দিল স্বজন হারানোর স্মৃতি

কাটোয়ার করুই ও কৈথন গ্রামের বাসিন্দাদের একটা অংশ সংসারের হাল ধরতে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। তাই গত বছর এ সময় কেউ বাবার সঙ্গে কেরলে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে যাচ্ছিলেন।

Advertisement

প্রণব দেবনাথ , সুদিন মণ্ডল

কাটোয়া ও ভাতার শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৪ ০৮:৪৩
Share:

কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা। —ফাইল চিত্র।

ফের ট্রেন দুর্ঘটনা। গত বছর এই জুন মাসেই ওড়িশার বাহানাগায় তিনটি ট্রেনের সংঘর্ষে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ২৯৬ জনের প্রাণ গিয়েছিল। তাঁদের মধ্যে পূর্ব বর্ধমান জেলার সাত জন ছিলেন। এ বার জলপাইগুড়ির কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা। মৃত ন’জনের মধ্যে জেলার এক জন আছেন। এই খবর স্বজন হারানোর স্মৃতি আরও এক বার উস্কে দিল জেলার কয়েকঘর মানুষের। শূণ্য চোখে তাকিয়ে তাঁদের প্রশ্ন, আমাদের দেশে প্রতি বছর ট্রেন দুর্ঘটনা কি নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে?

Advertisement

কাটোয়ার করুই ও কৈথন গ্রামের বাসিন্দাদের একটা অংশ সংসারের হাল ধরতে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। তাই গত বছর এ সময় কেউ বাবার সঙ্গে কেরলে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতে যাচ্ছিলেন। কেউ বা দেড় মাসের সন্তানকে দেখে কাজে ফিরছিলেন। আবার কেউ মেয়ের বিয়ের দেনা শোধ করতে যাচ্ছিলেন কেরলে। যাত্রা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পরেই সংঘর্ষে লাইন চ্যুত হয় ট্রেন। মৃত্যু হয় কাটোয়া ২ নম্বর ব্লকের করুই গ্রামের সর্দার পাড়ার বাসিন্দা ছোট্টু সর্দার, কলেজ সর্দার, সঞ্জিত সর্দার, সৃষ্টি রায়ের। এ ছাড়াও প্রাণ হারান কাটোয়া ১ ব্লকের কৈথন গ্রামে সাদ্দাম হোসেন শেখ, মন্তেশ্বরের রাইগ্রামের শরিফুল শেখ, তেঁতুলিয়া গ্রামের পাতু শেখ ও ভাতারের ভাটাকুল গ্রামের খোকন শেখ।

ছোট্টুর মা ঝর্না বলেন, “আমার ছেলেটা গত বছর সবে আঠেরোতে পা দিয়েছিল। ভাগ্নে কলেজ আর ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আমার স্বামী করমণ্ডলে কেরলে যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় স্বামী বেঁচে গেলেও ভাগ্নে আর ছেলেটা মারা গেল। কাঞ্চনজঙ্ঘার ঘটনা শুনেই ছেলেটার মুখটা ভেসে উঠল। আবার কতগুলো মায়ের কোল ফাঁকা
হয়ে গেল।”

Advertisement

সঞ্জয়ের স্ত্রী টুসু বলেন, “দুর্বিষহ দিনগুলির কথা মনে পরে গেল।” সাদ্দামের দাদা বাবু শেখ বলেন, “এ ভাবে ট্রেন দুর্ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। রেল ক্ষতিপূরণ দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু দাদা তো আর ফিরল না।”

খোকন শেখের মাথায় ও কোমরে গুরুতর আঘাত লাগে। বালেশ্বর হাসপাতালে চিকিৎসার পর তাঁকে কটক মেডিক্যালে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। দু’মাস লড়াইয়ের পর মৃত্য হয় তাঁর। বাড়িতে স্ত্রী ও দুই নাবালক সন্তান রয়েছে। স্ত্রী বুল্টি বিবি বলেন, “চেন্নাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন খোকন। অভাবের সংসার কোনও রকমে চলত। ক্ষতিপূরণ পেলেও সংসারের গতি কমে গিয়েছে।ইদের দিনে আবারও রেল দুর্ঘটনা, স্বামীর মৃত্যু শোককে দ্বিগুণ করে তুলেছে।” পাতুর স্ত্রী জরিনা বিবি বলেন, “একের পর এক রেল দুর্ঘটনা হচ্ছে। রেলের নিরাপত্তা আরও উন্নত হওয়া উচিত। নয় তো আর কত পরিবার স্বজন হারাবে ঠিক নেই।”

স্মৃতি তাজা হয়ে উঠেছে শেখ রহিম, শেখ সেলিমদেরও। বাহানাগার দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা ছিল ন’শোর কাছাকাছি। ভাতারের বামশোর গ্রামের ন’জনের একটি পরিযায়ী শ্রমিকের দল করমণ্ডল এক্সপ্রেসে ছিলেন। দুর্ঘটনায় তাঁরা সকলেই জখম হয়েছিলেন। এ বছর ইদে বাড়ি ফিরেছেন তাঁদের অনেকেই। কাঞ্চনজঙ্ঘার ঘটনায় তাঁরা জানান, আর্ত চিৎকার, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেহের স্মৃতি ভেসে উঠছে চোখের সামনে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement