দেওয়াল হারিয়ে বাড়িতে প্রচারেই জোর

দেওয়াল লিখন, ফ্লেক্সে নয়, একবারে ভোটারের দরজায় হত্যে দিয়েই ভোট বৈতরণী পার করবেন তাঁরা। কালনার বিজেপি নেতাদের দাবি অন্তত এমনটাই। মাস কয়েক আগেও বেহাল পুর পরিষেবা থেকে শুরু করে আর পাঁচটা সমস্যাকে সামনে রেখে কালনার বিভিন্ন ওয়ার্ডে জোর প্রচার চালাচ্ছিল বিজেপি। স্মারকলিপি, বিক্ষোভও চলছি। কিন্তু ভোট আসতেই পালে হাওয়াটা একটু যেন দমে গিয়েছে। শহরের দেওয়াল লিখন ও ফেক্সে পদ্মফুলের অভাব অন্তত সেই দাবিই করছে। বিজেপি শিবিরের অবশ্য দাবি, বাড়ি বাড়ি প্রচার করেই এ বার বাজিমাত করবেন তারা।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০১:২৬
Share:

শহরের এমনই কিছু দেওয়ালে চোখে পড়ছে বিজেপির প্রচার। ছবি: মধুমিতা মজুমদার।

দেওয়াল লিখন, ফ্লেক্সে নয়, একবারে ভোটারের দরজায় হত্যে দিয়েই ভোট বৈতরণী পার করবেন তাঁরা। কালনার বিজেপি নেতাদের দাবি অন্তত এমনটাই।

Advertisement

মাস কয়েক আগেও বেহাল পুর পরিষেবা থেকে শুরু করে আর পাঁচটা সমস্যাকে সামনে রেখে কালনার বিভিন্ন ওয়ার্ডে জোর প্রচার চালাচ্ছিল বিজেপি। স্মারকলিপি, বিক্ষোভও চলছি। কিন্তু ভোট আসতেই পালে হাওয়াটা একটু যেন দমে গিয়েছে। শহরের দেওয়াল লিখন ও ফেক্সে পদ্মফুলের অভাব অন্তত সেই দাবিই করছে। বিজেপি শিবিরের অবশ্য দাবি, বাড়ি বাড়ি প্রচার করেই এ বার বাজিমাত করবেন তারা।

গত লোকসভা ভোটের আগেও কালনা শহরে বিজেপির সংগঠন তেমন মজবুত ছিল না। তবে মোদী হাওয়ায় ভর করে এই শহরে লোকসভা ভোটে বেশ ভাল ফল করে তারা। কালনা পুর এলাকার ১৮টি ওয়ার্ড মিলিয়ে প্রায় ৬ হাজার ভোট পেয়েছিল পদ্মফুল। তারপর থেকেই সভা, মিছিল করে গোটা কালনা সরগরম করে তুলেছিল তারা। হাসপাতালের বেহাল চিকিৎসা পরিষেবা, রাস্তায় জমা জল, পুকুর ভরাটের মত নানা ইস্যু নিয়ে গণ আন্দোলনে সাধারণ মানুষের ভালই সমর্থন মিলেছিল। মাস কয়েক আগে শহরের অঘোরনাথ পার্ক স্টেডিয়ামে সভা করে যান দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। সেই সময় শহরের অনেকেরই মনে হয়েছিল, এ বারের কালনা পুরভোটে জোড়াফুলের প্রধান প্রতিপক্ষ হবে পদ্মফুল। কিন্তু পুরযুদ্ধের শুরু থেকেই পথে-প্রচারে সে ভাবে দেখা মিলছে না তাদের। শহরের দেওয়ালগুলিতে পদ্মফুলের ছবি তুলনায় অনেক কম। কর্মী-সমর্থকদের গলাও আর আগের মতো আত্মবিশ্বাসী শোনাচ্ছে না।

Advertisement

শহর বিজেপির নেতাদের অবশ্য দাবি, আর্থিক সমস্যার কারণেই তারা প্রচারে পিছিয়ে পড়েছেন। দলের বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের সভাপতি রাজীব ভৌমিক বলেন, ‘‘আর্থিক কারণেই কালনা শহরে দেওয়াল লিখনে আমরা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছি। তবে কর্মীরা জনসংযোগ করছেন। শেষ দিকে বড় সভা করা হবে।’’ তাঁর আরও দাবি, শহরের ১৮টি ওয়ার্ডেই দলীয় প্রার্থীরা নিজেদের এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে প্রচার করছেন। ছোট ছোট সভা ও বাড়ি বাড়ি জনসংযোগের মাধ্যমেই ভোটারদের কাছে পৌঁছে যাওয়া হবে।

তবে কয়েক মাস আগেও দলের কর্মসূচিতে যে উৎসাহ চোখে পড়ছিল তৃণমূলের সন্ত্রাসে তাতে যে ভাটা পড়েছে তা মেনে নিচ্ছেন বিজেপি নেতারা। তাঁদের দাবি, পুরসভার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার পর প্রথম দিকে প্রচুর নতুন মুখ মিলছিল। এরপর তৃণমূল হুমকি দিতে শুরু করে। দলের মিছিলে এলে মারধরের শাসানি দেওয়া হয়। তাই অনেকে মিছিলে আসছেন না। তবে অবাধ ভোট হলে তাঁদের ভোট পদ্মফুলেই পড়বে।

কালনা শহরের বিজেপি নেতা সুশান্ত পাণ্ডে বলেন, ‘‘গত দু’মাস ধরে শহরে দলের সদস্য সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। সেটা পুরভোটে কাজে আসবে। ভবিষ্যতে সংগঠন আরও মজবুত হবে।’’ বিজেপি নেতাদের দাবি, গত ৫ বছরে পুরসভা অনেক দুর্নীতি করেছে। কিন্তু উন্নয়ন হয়নি। উল্টে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রাস্তায় নেমে এসেছে। সিপিএম ও কংগ্রেস থেকে অনেকে দলে এসেছেন। তাই ভোটে সুবিধা পাবে বিজেপি।

কিন্তু শুধু ভোটারের উপর নির্ভর করলে কী সত্যিই ভাল ফল করা সম্ভব? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজেপির নিচুতলার কর্মীদের আশঙ্কা, এখন থেকেই প্রচারে ঝড় তুলতে না পারলে ভোটের দিন তৃণমূলের বাহিনীর সঙ্গে মোকাবিলা করা মুশকিল হবে। অনেকের কথায়, বাড়ি বাড়ি যাওয়া তো হবেই, সঙ্গে দেওয়াল লিখন, পোস্টারে শহরবাসীর চোখের সামনে থাকতে পারলে ভোটের খেলা জমবে আরও।

শহরের তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য বিজেপিকে পাত্তা দিতেই নারাজ। তাদের দাবি, লোকসভা নির্বাচনে মোদী হাওয়ার জন্য বিজেপি কিছু ভোট পেয়েছিল। তবে তারপর মানুষ নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। বিজেপি কর্মীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে কালনা পুরসভার পুরপ্রধান তথা কালনার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর দাবি, ‘‘মোদী হাওয়া এখন অতীত। গুটিকয়েক লোক নিয়ে নির্বাচনে কোনও দাগ কাটতে পারবে না বিজেপি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement