কালনার কদম্বা গ্রামে ফুটিফাটা পাট খেত। নিজস্ব চিত্র
মাটি ফুঁড়ে মাথা তুলেছে পাটের চারা। তার মধ্যেই জলাভাবে বহু পাটের জমিতে দেখা দিয়েছে ফাটল। মরতে বসেছে তিল গাছও। চল্লিশ ছোঁয়া তাপমাত্রায় ফসল নিয়ে চিন্তিত পূর্ব বর্ধমান জেলার চাষিরা। তাঁদের দাবি, আবহাওয়া দফতর এই সপ্তাহ জুড়ে তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে। ফলে ফসল বাঁচবে কি না, বাড়ছে চিন্তা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ বার বহু জমিতে আলুর ফলন তলানিতে নেমেছে। পেঁয়াজ চাষিদের দাবি, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরেও লাভজনক দাম মেলেনি। সাধারণত চৈত্র মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে বৈশাখের মাসের প্রথম পর্যন্ত পাট চাষের প্রস্তুতি নেন চাষিরা। পূর্ব বর্ধমান জেলায় পাট চাষ হয় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। যার মধ্যে কালনা মহকুমায় ৮৫০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। কালবৈশাখীর জেরে যে বৃষ্টি মেলে তাতে জমিতে বীজ ফেলে চাষিরা শুরু করেন পাট চাষ।চাষিদের দাবি, এ বার এখনও পর্যন্ত কালবৈশাখীর দেখা নেই। এর ফলে অনেক চাষি পাট চাষ শুরুই করতে পারেননি। অনেকে পুকুর, নালা, বিলের মতো ছোট জলাশয়ে চাষ শুরু করলেও বর্তমানে ওই ধরনের জলাশয়ের বেশির ভাগ শুকিয়ে গিয়েছে। ফলে পাট চারা বাঁচাতে সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। জলের অভাবে পাটের জমিতে দেখা দিয়েছে লম্বা লম্বা ফাটল।
কালনার পাট চাষি সুদেব সরকার বলেন, ‘‘পুকুরের জল দিয়ে বীজ বুনে চাষ শুরু করলেও এখন আর সেচের জল মিলছে না। জমি লাগোয়া পুকুর জলশূন্য হয়ে রয়েছে।’’ পাট চাষিদের একাংশের দাবি, এই পরিস্থিতিতে অনেককে সেচের জল কিনেও পাট চারা বাঁচাতে হচ্ছে। ফলে চাষের খরচ বাড়ছে। পূর্বস্থলীর চাষি সাহেব মণ্ডল জানিয়েছেন, এই সময়ে কিছুটা বৃষ্টি হলে পাট চাষ শুরু করে দেওয়া যায়। বৃষ্টির আশায় চাষ শুরু করতেও দেরি হয়ে যাচ্ছে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়ে গিয়েছে। যা মরসুমের উষ্ণতম দিন। তীব্র রোদের পাশাপাশি বইছে গরম হাওয়া। চাষিরা জানান, গরম আবহাওয়ার কারণে মাঠে মরতে বসেছে তিল গাছ। কমতে শুরু করেছে আনাজ। সবে গাছে ধরা আম, লিচুও শুকিয়ে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। জেলার এক সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘কালবৈশাখীর প্রভাবে যে বৃষ্টি মেলে তাতে চাষিরা পাট চাষের প্রস্তুতি সারেন চাষিরা। এ বার তেমন বৃষ্টি না মেলায় শুরুতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।’’