দুই অভিযুক্তকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
হাওড়ার ছাত্রনেতা আনিস খানের রহস্যমৃত্যুতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। এর মাঝেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দানা বাঁধল। দুই যুবককে দড়িতে বেঁধে প্রকাশ্যে পাড়ায় ঘোরানোর অভিযোগ উঠেছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। ওই দুই যুবক চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই সরব হয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। যদিও পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন জানিয়েছেন, বিষয়টি অপরাধের পুনর্নির্মাণের জন্য করা হয়ে থাকতে পারে।
জামালপুর থানার কাছে রাস্তার ধারে কয়েকটি দোকান রয়েছে। দিন দুয়েক আগে রাতের অন্ধকারে ওই এলাকার তিনটি দোকানে চুরি হয়। দোকান মালিকরা এ নিয়ে থানায় অভিযোগ জানান। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ চোরেদের সন্ধানে নামে। মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যেই পুলিশ শেখ সাবির এবং লব বেরা নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করে। সাবিরের বাড়ি জামালপুর থানা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে সেলিমাবাদ গ্রামে। অপর ধৃত লবের বাড়ি পুলমাথা এলাকায়। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা চুরির কথা স্বীকার করে নেয়। এর পর পুলিশ ওই দুই যুবককে নিয়ে চুরি হওয়া সামগ্রী উদ্ধারে নামে। উদ্ধার হয় সিগারেটের প্যাকেট, গুটখা এবং সাবান। এর পর পুলিশকর্মীরা ধৃত দুই যুবককে দড়িতে বেঁধে যে দোকানগুলিতে চুরি হয়েছে সেখানে নিয়ে যান।
একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে সেই সময়ের ছবি ধরা পড়েছে বলে দাবি। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্দেশে পুলিশকর্মীদের ওই দলে থাকা এক জনকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘এই মেয়েগুলো দাঁড়া তো। এই দেখ। এই দু’টোকে চিনে রাখ...চোর।’’ আর এই মন্তব্য নিয়েই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ওই ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি।
এমন কথা শোনার পর চোরেদের ছবি মোবাইলের ক্যামেরায় বন্দি করে রাখার হিড়িক পড়ে যায়। জামালপুর বাস স্ট্যান্ডের কাছে দাঁড়িয়ে দুই চোরের ছবি মোবাইলে বন্দি করেন হারাধন বৈরাগ্য নামে রায়নার এক বাসিন্দা। তাঁর কথায়, ‘‘চোরেদের চেনাতে পুলিশের এমন মার্চ প্রথম দেখলাম। পুলিশের এমন অভিনব কৌশল ক্যামেরাবন্দি না করে থাকতে পারলাম না। রায়নার বাসিন্দাদেরও এই চোরেদের সম্পর্কে জানাব।’’
পুলিশের এই ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর সাধারণ সম্পাদক ধীরাজ সেনগুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘‘এটা মানবাধিকার উল্লঙ্ঘন। মানুষের আত্মসম্মানকে পদদলিত করা হয়েছে। যাঁরা এটা করেছেন তাঁদেরই বিচার হওয়া উচিত। পুলিশ বিচারক নয়, এটা ভুলে গেলে চলবে না। আদালতের নির্দেশে টিআই প্যারেড হয়। এ ভাবে টিআই প্যারেড করা যায় না। ক্ষমতার অপব্যবহার করা হচ্ছে।’’
তবে পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কামনাশিস সেনের ব্যাখ্যা, ‘‘আমার কাছে এই ঘটনা সম্পর্কে তথ্য নেই। কাউকে এমন করে ঘোরানো যায় না। তবে এটা করে থাকলে অপরাধের পুনর্নির্মাণের জন্য করা হয়েছে বলেই মনে হয়।’’