TMC

Asansol: আসানসোলে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব রুখতেই কি জেলা সভাপতি বিধানকে মেয়র, জল্পনা চলছে শিল্প-শহরে

অমরনাথ, অভিজিৎ ছাড়াও পুরনিগম চালানোয় অভিজ্ঞ উজ্জ্বল এবং মলয়-ঘনিষ্ঠ তপনের মতো নেতার নাম নিয়েও জল্পনা চলেছিল মেয়র পদের জন্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২২:০৪
Share:

—নিজস্ব চিত্র।

পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি তথা বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়কে আসানসোলের পরবর্তী মেয়র ঘোষণা করে শুক্রবার তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব যে চমক দিয়েছেন, তা নিয়ে শিল্প শহরে কাটাছেঁড়া অব্যাহত। আট বারের কাউন্সিলর তথা আসানসোলে দলের প্রবীণ নেতা অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটকের ভাই অভিজিৎ ঘটক-সহ অন্তত ছ’জন মেয়রের দৌড়ে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও কেন আলোচনায় না-থাকা বিধানকেই প্রার্থী করা হল, তা নিয়ে দলের অন্দরে ভাসছে একাধিত মত।

Advertisement

অমরনাথ আর অভিজিৎ ছাড়াও পুরসভা চালানোয় অভিজ্ঞ উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় এবং মলয়-ঘনিষ্ঠ তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতার নাম নিয়েও জল্পনা চলেছিল মেয়র-পদের জন্য। আসানসোলের তৃণমূল শিবিরের এক নেতার বক্তব্য, ‘‘মেয়র পদের দাবিদার হিসেবে এত নাম উঠে এলে তা আসলে গোষ্ঠী কোন্দলেরই ইঙ্গিত দেয়।’’ জেলা নেতৃত্বের আরও এক সূত্রের দাবি, হয়তো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এড়াতেই বিধানকে মেয়র করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শীর্ষনেতৃত্ব। ১০৬ ওয়ার্ডের মধ্যে ৯১ ওয়ার্ডে জিতে বোর্ড গঠনের পর গোষ্ঠী কোন্দলের কারণে মানুষের পরিষেবা দেওয়ার কাজ ব্যাহত হলে দলের ভাবমূর্তির পক্ষে কখনওই ভাল হবে না, এমনটা আচঁ করেই ‘কোনও গোষ্ঠীতে না থাকা’ বিধানকে মেয়র পদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যদিও একে ‘নিছকই দাবি’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন জেলা নেতৃত্ব এবং বিধান।

শনিবার কালীঘাটের বাড়িতে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক ডেকেছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, আসানসোলের মেয়র নির্বাচন নিয়ে দলের শীর্ষনেতৃত্বের মধ্যে আলোচনার সময় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী মলয়ও। ওই সূত্রেরই দাবি, শিল্প শহরের মেয়রের জন্য ভাই অভিজিতের নাম সুপারিশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু রাজি ছিলেন না দলনেত্রী। শোনা যায়, মমতার ‘আস্থাভাজন’ নন অভিজিৎ। সূত্রের ব্যাখ্যা, ২০১৪ সালে আসানসোল উত্তর লোকসভা আসনে তৎকালীন বিজেপি নেতা (বর্তমানে তৃণমূলে) বাবুল সুপ্রিয়ের বিরুদ্ধে দোলা সেনকে টিকিট দিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু সাংগঠনিক দায়িত্বে থাকা অভিজিতের ‘নিষ্ক্রিয়তার কারণেই’ হারতে হয় দোলাকে। যা একেবারেই ভাল চোখে দেখেননি দলনেত্রী। এর পর অভিজিতের পশ্চিম বর্ধমান জেলার শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হওয়া নিয়েও আপত্তি ছিল মমতার। শোনা যায়, ঘনিষ্ঠ মহলে দলনেত্রী চেয়েছিলেন, অন্য কাউকে সভাপতি করা হোক।

Advertisement

যদিও এই তত্ত্ব মানতে রাজি হননি অভিজিৎ ঘনিষ্ঠেরা। তাঁদের মত, যদি এই ব্যাখ্যাকেই আসল কারণ বলে ধরে নেওয়া হয়, তা হলে তো অভিজিৎকে ডেপুটি মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে দু’বার ভাবতেন শীর্ষনেতৃত্ব। অভিজিৎ বলেন, ‘‘কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তা শীর্ষনেতৃত্বই বলতে পারবেন। দল আমায় যা দায়িত্ব দিয়েছে, আমি তা পালন করব।’’

কিন্তু সর্বাধিক আলোচনায় থাকা প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ নেতা অমরনাথকে কেন আসানসোলের মেয়র করা হল না, তা নিয়েও বহু প্রশ্ন উঠছে। এক নেতা বলেন, ‘‘২০১৫ সালের ভোটের পর পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান থেকেছেন অমরনাথ। জিতেন্দ্র তিওয়ারি বিজেপি-তে যাওয়ার পর অমরনাথই পুরনিগম সামলেছেন। তার পরেও পুরসভা পরিচালনার কাজে সব চেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও অমরনাথকে মেয়র করা হল না দেখে অবাক লাগছে।’’ মেয়র-পদে তাঁর নাম ঘোষণার অপেক্ষায় ছিলেন অমরনাথও। সেটা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট। বিধানের নাম ঘোষণার পর অমরনাথ বলেন, ‘‘দল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মেনে নেব। আমি যা কাজ করেছি, ভেবেছিলাম, হয়তো মেয়র করা হবে আমায়। তবে ঠিক আছে। দলের সিদ্ধান্ত মাথা পেতে নিয়েছি।’’

ওই শহরের তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, আগের পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে দু’বছর পুরপ্রশাসক হিসেবে অমরনাথ কী ভাবে পুরনিগমের কাজ পরিচালনা করেছেন, তা হয়তো নজরে ছিল শীর্ষনেতৃত্বের। এক সূত্রের দাবি, ‘‘অমরনাথকে মেয়র পদে বসানো হলেও তা মন্ত্রী মলয়ের প্রভাবমুক্ত করে তোলা সম্ভব হত না।’’ তাঁর মত, এই কারণেই বিধানকে ‘নিরাপদ বিকল্প’ হিসেবে দেখেছেন শীর্ষ নেতৃত্ব।

অন্য দিকে, শীর্ষনেতৃত্বের সঙ্গে বিধানের সম্পর্ক বরাবরই ভাল বলে শোনা যায়। দলের পুরনো সৈনিক তিনি। ঘনিষ্ঠেরা বলেন, সবাইকে সঙ্গেই নিয়ে চলতে পারেন বিধান। ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, কংগ্রেসি পরিবার থেকে উঠে আসা বিধান বরাবর দলনেত্রীর নির্দেশ মেনেই কাজ করেছেন। ২০১১ এবং ২০১৬ সালের পর গত বিধানসভা নির্বাচনেও বিধানের জয়ে খুবই খুশি ছিলেন মমতা। এ ছাড়া কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে বিধানের সম্পর্ক ভাল হওয়ায় দুই পুরসভার কাজের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করা হবে সম্ভব হতে পারে। হয়তো এই সব বিষয় নজরে রেখেই আসানসোলের ভোটার না-হওয়া সত্ত্বেও বিধানকে জন্মদিনে মেয়র-পদ উপহার দিলেন মমতা, এমনটাই মত তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে। বিধানও প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘সবই দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement