Smuggling

Smuggling: নদের পাড়ে ‘চলে’ সাদা পাথর কাটা

সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাকর ও দামোদর নদ লাগোয়া এলাকায় কয়েক হাত মাটি খুঁড়লেই এ ধরনের ‘সাদা পাথর’ (‌কোয়ার্ৎজ) পাওয়া যায়।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

সালানপুর শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২১ ০৫:৩৫
Share:

সিদাবাড়ি এলাকায় এ ভাবেই ডাঁই করে রাখা রয়েছে পাথর। ছবি: পাপন চৌধুরী।

এলাকা, পশ্চিম বর্ধমানের সালানপুরের দেন্দুয়া পঞ্চায়েতের বাথানবাড়ি। পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে, বরাকর নদ। দেখা গেল, গাঁইতি, লোহার শিক হাতে মাটি খুঁড়ছেন এক দল মানুষ। আশপাশে ডাঁই করে রাখা পাথর। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, ওই পাথর রাতের অন্ধকারে ডাম্পার, ট্রাক্টরে চাপিয়ে ‘পাচার’ করা হয় ভিন্-জেলা, ভিন্-রাজ্যে। শুধু বাথানবাড়ি নয়, হদলা, সিদাবাড়ি, শান্তিনগর, বাঁশকেটিয়া, সবুজদ্বীপ ও সিআইএসএফ ক্যাম্প লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকায় এই দৃশ্য নজরে পড়ে বলে অভিযোগ। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, খবর পেলেই অভিযান চলে।

Advertisement

ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর (সালানপুর) সূত্রে জানা গিয়েছে, বরাকর ও দামোদর নদ লাগোয়া এলাকায় কয়েক হাত মাটি খুঁড়লেই এ ধরনের ‘সাদা পাথর’ (‌কোয়ার্ৎজ) পাওয়া যায়।

কেন এই কাজ চলে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিকদের দাবি, ‘‘পঞ্চায়েতের একশো দিনের কাজ হয় এলাকায়। কিন্তু বাড়তি রোজগার ছাড়া, সংসার চালানো সম্ভব নয়। তাই পাথর কাটি। দিনে ২৫ কিলোগ্রাম পাথর বার করতে পারলেই মজুরি মেলে একশো টাকা।’’ ‘মজুরি’ দেন কারা? স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বাথানবাড়ি এলাকার দুই যুবক এই গোটা কারবারের ‘ঠিকাদার’। তাঁরা জানালেন, দিনমজুরদের তোলা পাথর তাঁরা ডাম্পার বা ট্রাক্টরে চাপিয়ে দুর্গাপুর ও ঝাড়খণ্ডের কয়েকটি পাথরকলে পাঠান। টন প্রতি ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকায় বিক্রি হয়। পথে ধরা পড়ার ভয় নেই? তাঁদের জবাব, ‘‘সব ম্যানেজ করা আছে।’’ কী ভাবে ‘ম্যানেজ’ করা হয়েছে, তা অবশ্য ভেঙে বলতে চাননি তাঁরা। সাধারণত, পাথরকলে এই ধরনের পাথর মিহি গুঁড়ো করা হয়। তার পরে তা প্যাকেটবন্দি করে সিরামিকের সামগ্রী তৈরির কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে পাঠানো হয়। এই গুঁড়ো মোজ়েইক মেঝে ও সিরামিকের সামগ্রী পালিশের কাজেও ব্যবহার
করা হয়।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি শিপ্রা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নদের পাড় কাটা হচ্ছে প্রতি দিন। এর ফলে, বর্ষায় নদে জল বাড়লে গ্রামে ঢুকে যাচ্ছে। জমি নষ্ট হচ্ছে। ধস নামছে। এ ভাবে চলতে থাকলে বিপত্তি আরও বাড়বে। তবে এই সমস্যা আজকের নয়, বহু দিনের।’’ দেন্দুয়া পঞ্চায়েতের বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ (কুটির শিল্প) মহম্মদ আরমানও বলেন, ‘‘সমস্যার কথা আমরা জানি। প্রশাসনের নজরে আছে বিষয়টি।’’

এ দিকে, প্রশাসন সূত্রেই জানা গেল, যেখানে এই কারবার চলছে, সেই জমিগুলি বেশির ভাগই খাসজমি অথবা ডিভিসি-র জমি। বিষয়টি নিয়ে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (সালানপুর) শুভদীপ টিকাদারের অবশ্য দাবি, ‘‘নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। পরপর অভিযান চললে বেশ কিছু দিন এই কারবার বন্ধ থাকে। অভিযানে ভাটা পড়লেই ফের শুরু হয় পাথর কাটা।’’ দফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তার দাবি, এই কারবারিরা ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ হওয়ায় পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী ছাড়া, অভিযান চালানো কার্যত অসম্ভব। ওই আধিকারিক এ-ও জানান, এই পাথর তোলার জন্য জমি ইজারা দেওয়ার নিয়মই নেই। ডিভিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা জানান, বিষয়টি তাঁদের নজরে এলেই স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

পাশাপাশি, আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট জানিয়েছে, বাঁশকেটিয়া লাগোয়া আল্লাডি মোড় থেকে এই পাথর বোঝাই একটি ডাম্পার আটক করেছে রূপনারায়ণপুর ফাঁড়ি। ডাম্পারের চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডাম্পার মালিকের খোঁজ চলছে। বিষয়টি সামনে আসার পরেই, কে বা কারা এই কারবারের ‘মাথা’, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ওই ডাম্পারে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার পাথর ছিল। ডাম্পারটির বৈধ কাগজপত্র আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ কমিশনার অজয়কুমার ঠাকুর বলেন, ‘‘কোনও রকম অবৈধ কারবারকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। নিয়মিত অভিযান চলছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement