ঘটনা এক) পুজোর আগে রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা আসেন রাস্তা উদ্বোধনে। মন্ত্রীকে ঘিরে ধরে পাড়ার মহিলাদের দাবি, রাস্তার আগে বেআইনি মদের দোকানগুলো বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিন।
ঘটনা দুই) মাস চারেক আগে জোট বেঁধে এলাকার মহিলারা ঘেরাও করেন থানা। দাবি সেই একই।
— একটা বা দু’টো নয়, প্রশাসনের নানা মহলে রানিগঞ্জ, জামুড়িয়ার নানা এলাকার মহিলারা নানা ভাবে বারবার অভিযোগ জানিয়েছেন, চোলাই, মহুয়া-সহ হরেক কিসিমের বেআইনি দেশি ও বিদেশি মদ মিলছে হাতের নাগালে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাড়িতে অশান্তি। প্রশ্নের মুখে পড়ছে এলাকার নিরাপত্তাও।
জেলা আবগারি দফতর সূত্রে জানা যায়, জামুড়িয়ার বাগডিহা-সিদ্ধপুর, চিচুড়িয়া, ডাহুকা, বেলডাঙা, কেন্দা মাঝিপাড়া, পরাশিয়া মাঝিপাড়া, দামোদরপুর, শিরিষডাঙা, বেনালি, নিঘা, জামুড়িয়াগ্রাম রুইদাসপাড়ায় এমন মদের রমরমা। একই হাল রানিগঞ্জের রতিবাটি, জেকে নগর-বেলিয়াবাথান, চাপুই মাঝিপাড়া, বাঁশরা, বল্লভপুর, তিরাটের হাড়াভাঙা, পলাশডাঙা-সহ বেশ কিছু এলাকাতেও।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই এলাকাগুলিরই কিছু জায়গায় গিয়ে দেখে গেল, ছোট্ট গুমটি থেকে হাতবদল হচ্ছে লম্বা, বেঁটে, চ্যাপ্টা নানা আকারের বোতলের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা জানালেন, ক্রেতার দলে যুবক, প্রৌঢ়দের পাশাপাশি, স্থানীয় স্কুল-কলেজ পড়ুয়ারাও।
বাজারে কোন পথে ঢুকছে এই সব মদ? দামই বা কত? এই ‘ব্যবসা’র সঙ্গে যুক্ত কয়েক জন জানালেন, প্রায় সব ধরনের দেশি মদের দর, বোতল প্রতি ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরেও দেদার বিকোচ্ছে মদ। আবগারি দফতর সূত্রে জানা যায়, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে নকল মদও মিলছে হাতের নাগালে। সাধারণত, তিন ভাবে মদের জোগান আসছে এই বেআইনি বাজারে। প্রথমত, এলাকার বৈধ দোকান থেকে কিনে তা বিক্রি হচ্ছে অবৈধ ভাবে। দ্বিতীয়ত, বেশ কিছু এলাকায় কিছু ঘরে তৈরি হচ্ছে মহুয়া, চোলাই, হাড়িয়া, পচাই-সহ নানা ধরনের মদ। তৃতীয়ত, এলাকার ভাটিগুলি থেকেও অবৈধ মদ তৈরি হয়ে কম দামে তা বাজারে ছড়াচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পুজোর আগে রানিগঞ্জের চকরামবাটিতে প্রশাসনের এক শীর্ষকর্তা কাছে এলাকার মহিলারা পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা অবৈধ মদের দোকানগুলি বন্ধ করার দাবি জানান। একই দাবিতে চার মাস আগে রানিগঞ্জের মহাবীর কোলিয়ারি ও সিহারসোল খোলামুখ খনি এলাকার মহিলারা রানিগঞ্জ থানা এবং মণ্ডলপুরের মহিলারা জামুড়িয়া থানা ঘেরাও করেন। রানিগঞ্জ বণিকসভার তরফে রাজু খেতানের আশঙ্কা, ‘‘বেআইনি মদের জেরে প্রাণহানি হতে পারে। তা ছাড়া বৈধ ব্যবসায়ীরা তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেনই।’’
কিন্তু এত কিছুর পরেও অবৈধ মদের রমরমায় লাগাম টানা যায়নি কেন? জেলা আবগারি দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘‘দফতরে কর্মী সংখ্যা কম। তাই আমরা এক দিকে যখন অভিযান করি, মদের রমরমা বন্ধ হয় সে জায়গায়। কিন্তু আবার ১৫ দিন পরে অবস্থা যে কে সেই।’’ পশ্চিম বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রলয় রায়চৌধুরীর অবশ্য দাবি, ‘‘নিয়মিত অভিযান চলছে। এখন বেআইনি মদের কারবার বন্ধ।’’