দুর্গাপুরের সভায় শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিম বর্ধমানে ফের অবৈধ কয়লার কারবার শুরু হয়েছে, মঙ্গলবার দুর্গাপুরে এই অভিযোগ তুললেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী। সে কারবারের সঙ্গে তৃণমূলের দুই বিধায়কের ‘অনুগামীরা’ জড়িত বলেও অভিযোগ করেন তিনি। যা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের অষ্টম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এ দিন দুর্গাপুরের বেনাচিতির পাঁচমাথা মোড়ে জনসভার আয়োজন করে বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারী ছাড়াও ছিলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অজয় ভট্ট, সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, দলের রাজ্য সম্পাদক তথা বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই, বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল, অজয় পোদ্দার, দলের নেত্রী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল, পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি দিলীপ দে, জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দত্ত, কাউন্সিলর চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ঝড়-বৃষ্টির জন্য সভা সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। সামান্য বক্তব্য রেখেই সভা শেষ করে দেন শুভেন্দু। শুভেন্দুর অভিযোগে, “আবার এখানে (পশ্চিম বর্ধমানে) কয়লার কারবার (অবৈধ) শুরু করেছে। নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী আর হরেরাম সিংহের ছেলেরা করছে। আমি বন্ধ করাচ্ছি।”
সম্প্রতি পাণ্ডবেশ্বরে ইসিএলের শোনপুর বাজারি প্রকল্পের নতুন সিএইচপি কোল-হ্যান্ডলিং প্ল্যান্টে কয়লা ‘চুরি’ আটকাতে গিয়ে আক্রান্ত হয় সিআইএসএফ ও পুলিশ। ‘হামলাকারীদের’ ছোড়া পাথরে তাদের দু’টি গাড়ির সামনের কাচও ভেঙেছে বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, কয়লা নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘দুষ্কৃতীদের’ নিয়ে আসা বেশ কিছু সাইকেল বাজেয়াপ্ত করা হয়। এর পরেই, কিছুটা দূরে এলাকার কয়েক জন মহিলা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তখনকার মতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। অভিযোগ, রাতে কয়লা ‘চোরেরা’ ফের ঘটনাস্থলে যায়। সিআইএসএফ ও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই শ’খানেক মহিলা তাদের গাড়ি তাক করে ইট, পাথর ছুড়তে থাকে।
সে ঘটনার সূত্র ধরে বিজেপির আসানসোল জেলা সহ-সভাপতি ছোটন চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, পাণ্ডবেশ্বরের ঘটনার কিছু দিন আগে, বাঁকোলা এরিয়ায় একটি সাইকেলে কয়লা নিয়ে যাওয়া এক ব্যক্তিকে আটকাতে গিয়ে প্রহৃত হন ইসিএলের এক কর্মী।এ ছাড়া, পাণ্ডববেশ্বর বিধানসভার দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের জব্বরপল্লি এলাকার একটি জঙ্গলে ও আমলোকায় একটি ফাঁকা জায়গায় কয়লার অবৈধ ‘ডিপো’ রয়েছে বলে দাবি ছোটনের। চুরুলিয়া, কেন্দা এলাকায় প্রায়ই সাইকেলে করে কয়লা পাচার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। তিনি বলেন, “এর থেকে প্রমাণিত, শুভেন্দু অধিকারী যা বলেছেন, তা সত্যি।” অভিযোগ অস্বীকার করে জামুড়িয়ার তৃণমূল বিধায়ক হরেরাম বলেন, “কয়লা জাতীয় সম্পত্তি। এটা রক্ষা করা সিআইএসএফ-এর। শুভেন্দু সিআইএসএফ-এর বিরুদ্ধে মামলা করুন। তাতে তাঁর উদ্দেশ্য সফল হবে।” একটি বৈঠকে ব্যস্ত থাকায় শুভেন্দুর অভিযোগের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
কয়লা চুরির অভিযোগ প্রসঙ্গে সিআইএসএফের এক কর্তা জানান, কয়লা চুরি ও পাচার রুখতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তার দাবি, অভিযোগ পেলেই পুলিশ ব্যবস্থা নেয়।ইতিমধ্যে সিআইএসএফ ও পুলিশ যৌথ ভাবে বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালিয়েছে।