বেআইনি ভাবে কয়লা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরে। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ
বাহুবল, অর্থবল ও লোকবল— এই তিন বলে বলীয়ান ওঁদের শিল্পাঞ্চলের প্রতিটি ভোটেই দেখা যায় বলে রাজনৈতিক মহলের দাবি। বেআইনি কয়লা কারবারের বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডির তদন্ত, পর পর গ্রেফতার, কয়লা কারবারি বলে পরিচিত রাজু ঝা খুন-সহ নানা কারণে এই মুহূর্তে জেলার অবৈধ কয়লা কারবারে কিছুটা ভাটার টান, দাবি স্থানীয় নানা সূত্রের। তা সত্ত্বেও আজ, শনিবার পঞ্চায়েত ভোটে অবৈধ কয়লা কারবারে জড়িতদের পুরনো ‘ভূমিকায়’ দেখা যাবে কি না, সে নিয়ে কৌতূহল রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।
খনি অঞ্চলে ভোট-মাঠে কয়লা মাফিয়াদের দাপটের অভিযোগ গত প্রায় আড়াই দশক ধরে বহু বারই উঠেছে। বিরোধীদের একাংশের দাবি, শুধু ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে সে ধারায় ব্যতিক্রম নজরে পড়েছিল বলে বিরোধীদের একাংশের মত। ওই ভোটের আগে থেকে বেআইনি কয়লা কারবারের তদন্তে সিবিআইয়ের তৎপরতা দেখা যায়। কিন্তু তার পরে, ২০২২-এর আসানসোল পুরভোটে ‘মাফিয়াদের’ সাঙ্গপাঙ্গকে শাসক দলের হয়ে গোলমাল পাকাতে দেখা গিয়েছিল বলে অভিযোগ সিপিএম এবং বিজেপির। তৃণমূল অবশ্য সে অভিযোগ আমল দেয়নি।
এই পরিস্থিতিতে ফের ভোট। জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের অনেকের দাবি, মাফিয়াদের ভোটে ভূমিকা মূলত তিন ধরনের। মিছিলে লোক পাঠানো, তহবিল জোগানো, ভোটের দিন বুথ দখলের অভিযোগ বরাবরের। এ বার অবৈধ খনন অনেকাংশেই বন্ধ। কিছু জায়গায় বৈধ খনি থেকে কয়লা চুরির অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু ‘সিন্ডিকেটের’ মাধ্যমে যে কয়লা পাচার চলত, তা বিশেষ দেখা যাচ্ছে না। ফলে, অবৈধ কয়লা কারবারের টাকা এ বার ভোটের কাজে তেমন জোগান হয়নি বলেই দাবি।
যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, মনোনয়ন জমা দিতে বাধা, মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর মতো নানা কাজে সালানপুর, বারাবনি, জামুড়িয়া, পাণ্ডবেশ্বরে দেখা গিয়েছে কয়লা কারবারিদের সঙ্গীদের। অর্থাৎ, বাহুবলের প্রয়োগ ইতিমধ্যে দেখা গিয়েছে। ভোটের দিন বুথ দখলেও তাঁদের দেখা যেতে পারে বলে আশঙ্কা বিরোধীদের।
বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার সরব হয় বিরোধীরা। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “সালানপুর-সহ জেলার নানা প্রান্তে ভোট প্রক্রিয়ায় তৃণমূল কয়লা মাফিয়াদের ব্যবহার করেছে। ভোটের দিন ও গণনার দিনও তারা সক্রিয় থাকবে বলেই আমাদের ধারণা।” বিজেপির আসানসোল জেলা সভাপতি দিলীপ দে-র বক্তব্য, “কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার চাপে কয়লা কারবারে কিছুটা লাগাম টানা গেলেও, মাফিয়ারা এখনও সক্রিয়। ওদের তৃণমূল বুঝিয়েছে, পঞ্চায়েতের পরে কয়লা কারবার রমরম করে চলবে। ফলে, ভোটে সহযোগিতা করতে হবে।”
অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের তৎপরতায় অবৈধ কয়লার কারবার বন্ধ। ইসিএলের অপদার্থতায় তাদের খনি থেকে কয়লা চুরি হচ্ছে। এ সবের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নেই।” ইসিএলের নিরাপত্তা দফতরের জিএম শৈলেন্দ্রকুমার সিংহ অবশ্য জানান, ইসিএল চুরি আটকাতে তৎপর রয়েছে। ছ’মাসের মধ্যে ৩০০ টন কয়লা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।