মেলায় হরেক পসরা। ঝামটপুরে। নিজস্ব চিত্র
প্রভু নিত্যানন্দের ‘স্বপ্নাদেশ’ পেয়ে ঘর ছেড়ে যে যুবক বৃন্দাবনে গিয়ে শাস্ত্রজ্ঞ হয়ে উঠেছিলেন, কালক্রমে তিনিই বৃদ্ধাবস্থায় লিখে ফেলেন শ্রীচৈতন্যের জীবনী। কেতুগ্রামের ঝামটপুরে সেই শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থের স্রষ্টা কৃষ্ণদাস কবিরাজের মেলা শনিবার থেকেই জমে উঠল। কৃষ্ণদাস কবিরাজের তিরোধান দিবস উপলক্ষে তাঁর জন্মভিটে ঘিরে চার দিনের এই জমজমাট মেলা চলে।
কেতুগ্রামের ঝামটপুর গ্রামের গোস্বামীপাড়ায় কৃষ্ণদাস কবিরাজের জন্মভিটে বৈষ্ণবপ্রাণ মানুষজনের কাছে অন্যতম তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। মেলা উপলক্ষে বসেছে হরেক দোকান-পসরা। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তেরা আসছেন। প্রায় সাড়ে চারশো বছরের পুরনো, কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীর আরাধ্য গোপাল মূর্তি, শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থের তুলোট কাগজে লেখা পাণ্ডুলিপি এবং কৃষ্ণদাসের ব্যবহৃত খড়ম রাখা আছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আশ্বিনের শুক্লা দ্বাদশী তিথিতে কৃষ্ণদাস কবিরাজের তিরোভাব দিবস উপলক্ষে জন্মভিটেয় বৈষ্ণবদের বিশেষ অনুষ্ঠান হয়। চার দিন ধরে এই অনুষ্ঠানে বাংলার বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর ভক্তের ভিড়হয়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে শিল্পীরা এসে নামকীর্তন, মনোহরশাহি কীর্তন, গড়ানহাটি কীর্তন, রেনেটি কীর্তন-সহ লীলাকীর্তন, পদাবলী কীর্তন পরিবেশন করেন। এক সময়ে বাংলাদেশ থেকে কীর্তনীয়ারা আসতেন। এখন নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, হুগলি, বীরভূম, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে নামী কীর্তনীয়ারা আসেন।
মেলায় আসা নদিয়ার সনাতন দাস বলেন, ‘‘কবিরাজ গোস্বামীর বসতভিটের মাটি শরীরে মাখলে সারা বছর ভাল যায়, এ বিশ্বাস আমাদের রয়েছে। ভক্তেরা এক দিন অন্নভোগ, এক দিন চিঁড়ের ভোগ দেন। লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়। প্রতি বছরই মেলায় এসে আনন্দ করি।’’ ঝামটপুর কথিত রয়েছে, কৃষ্ণদাস ১৫৮৪ সালের পরে ঝামটপুর গ্রামে বসতভিটেয় বসে চৈতন্যচরিত্রামৃত লেখা শুরু করেন। কিছু দিন পরে জীব গোস্বামীর নির্দেশে তিনি বৃন্দাবনে গিয়ে বাকি অংশ লেখেন। মোট তিনটে খণ্ডে ৬২ অধ্যায়ে ১২,০৫১টি শ্লোক সমৃদ্ধ ওই লেখা শেষ করেন ১৬০৮ সালে, বৃন্দাবনে বসেই। এ ছাড়াও, কৃষ্ণদাস গোবিন্দলীলামৃত, অদ্বৈতসূত্র কড়চা, স্বজপর্বনম, কৃষ্ণকথামৃত প্রভৃতি গ্রন্থ ঝামটপুরে বসে রচনা করেছিলেন। সে সব পাণ্ডুলিপি এখন অবহেলায় নষ্ট হতে বসেছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর।
এলাকাবাসীর আক্ষেপ, বসতভিটেতেই এক সময়ে গড়ে উঠেছিল কৃষ্ণদাস কবিরাজ স্মৃতি পাঠাগার। এখন সেটির কঙ্কালসার দশা। এ বিষয়ে সরকারি নজরের আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ বলেন, ‘‘ঐতিহাসিক ওই মেলা সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করার জন্য পঞ্চায়েত থেকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করে। এ ছাড়াও, কবিরাজের বসতভিটে বর্তমানে কী অবস্থায় রয়েছে, তা খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’