ফাইল চিত্র।
‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে এ বার ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের জন্য আবেদন জানানো যাবে। প্রশাসনের কর্তারা জানান, প্রকল্পটিতে আবেদন জানানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মহিলাদের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। কিন্তু জেলার নানা প্রান্তের মহিলাদের একাংশ জানাচ্ছেন, তাঁদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ও অ্যাকাউন্ট নেই। এমনকি, অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্রও নেই। ফলে, ওই মহিলারা আদৌ ওই প্রকল্পের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিরোধীরা। যদিও জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, চিন্তার কোনও কারণ নেই।
পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১৬ থেকে ৩১ অগস্ট ‘দুয়ারে সরকার’ শিবির চলবে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৫ থেকে ৬০ বছরের মহিলা ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। এই প্রকল্পে তফসিলি জাতি-উপজাতি মহিলাদের জন্য মাসে এক হাজার এবং সাধারণ মহিলাদের জন্য মাসে পাঁচশো টাকা করে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দেবে রাজ্য সরকার।
কিন্তু টাকা জমা দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতেই হবে বলে প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়। ‘ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ় ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া’র সদস্য বিমল গোস্বামী জানান, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আধার ও প্যান কার্ড লাগবে। যদি প্যান কার্ড কারও না থাকে সে ক্ষেত্রে ভোটার কার্ড লাগবে। কিন্তু জেলার নানা প্রান্তের মহিলাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা, আধার ও ভোটার কার্ড থাকলেও প্যান কার্ড না থাকার জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব হয়নি।
রানিগঞ্জের আমরাসোঁতা পঞ্চায়েতের বাঁশড়া মাঝিপাড়ার বাসিন্দা জয়ন্তী কোড়া, পূজা সোরেন, পাবতী মুর্মু, লক্ষ্মী ভুঁইয়াদের অভিযোগ, ‘‘আমাদের প্যান কার্ড নেই। তাই এখনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারিনি। স্বাস্থ্যসাথীর কার্ডও নেই। ফলে, আমরা লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধা পাব কি না, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’’ বল্লভপুর পঞ্চায়েতের নূপুর আদিবাসীপাড়ার সনকা মুর্মু, পার্বতী হেমব্রমেরাও একই পরিস্থিতির কথা জানান। রঘুনাথচকের হাজিমা মুর্মুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে। কিন্তু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। অ্যাকাউন্ট খোলার নথিও নেই। তাই ওই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে গিয়ে, হয়রানির শিকার হব না তো?’’
যদিও, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখার আধিকারিকেরা জানান, প্যান কার্ড না থাকলেও অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে। কিন্তু তাঁরা সাধারণত, অ্যাকাউন্টে আর্থিক লেনদেন হবে বলে প্যান কার্ডের নথিই চেয়ে থাকেন।
এই পরিস্থিতিতে সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায়সরকার, বিজেপি নেতা শিবরাম বর্মনদের অভিযোগ, ‘‘যাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার নথিপত্র নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা স্পষ্ট করেনি সরকার। ফলে, ওই মহিলারা যে সমস্যায় পড়বেন, তা বোঝা যাচ্ছে। এই সুযোগে তাঁদের বিভ্রান্তও করতে পারেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।’’ যদিও তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘বিরোধীরা সব কিছু নিয়েই মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। এই শিবির ও প্রকল্প নিয়ে সরকারের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে।’’
ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার নথিপত্র না থাকলে, আবেদন করতে আসা মহিলারা কোনও সমস্যায় পড়বেন না তো? জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) বিভু গোয়েল বলেন, ‘‘কোনও চিন্তার কারণ নেই। এক ছাতার তলায় সব আছে। যাবতীয় ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’’ তিনি জানান, ৮ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর আবেদনপত্রগুলি খতিয়ে দেখা হবে এবং ২৪ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যাঁরা প্রকল্পের সুবিধা পাবেন, তাঁদের শংসাপত্র দেওয়া হবে। আপাতত, জেলায় ৩০৪টি শিবির আয়োজিত হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে।