কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল। — ফাইল চিত্র।
ভুয়ো বিল জমা দিয়ে কাটোয়া হাসপাতালে আর্থিক প্রতারণার একটি চক্রের খোঁজ মিলেছিল মাস তিনেক আগে। প্রায় পৌনে এক কোটি টাকার ওই মামলাটি বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিল মিটিয়ে দেওয়ার দাবিতে এক ঠিকাদার কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপারকে নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। সোমবার সুপার শেখ সৌভিক আলম নিরাপত্তাহীনতার দাবি তুলে কিংশুক মণ্ডল নামে ওই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও দায়ের করেন। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তুলেছেন রোগীকল্যাণ সমিতির সদস্য তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। আজ, মঙ্গলবার স্বাস্থ্য দফতরের তরফে হাসপাতালে এসে তদন্ত করার কথা।
কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালের বিভিন্ন কাজে সরকারি নিয়মে ঠিকাদার নিয়োগ করে প্রয়োজন অনুসারে কখনও গাড়ি ভাড়া, খাবার, ওষুধ, আসবাব পত্র, বৈদ্যুতিন জিনিসপত্র নেওয়া হয়। ঠিকাদারেরা দরপত্র অনুসারে সংশ্লিষ্ট দফতরে বিল জমা করে প্রাপ্য টাকা তুলে নেন।
২০১৯-২০২০ আর্থিক বছরের শেষ দিক থেকে ঠিকাদারদের প্রাপ্য বিল পেতে সমস্যা শুরু হয়। জমা করা বিলের সঙ্গে দরপত্রের কোনও সম্পর্ক নেই, এমনটা নজরে আসে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকে তৎকালীন সুপারের নেতৃত্বে যাচাই কমিটি গঠন করে বিলগুলি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মোট ৮১টি বিলে ভুয়ো নথি দেখিয়ে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকার বিল বাকি রয়েছে বলে দেখা যায়। যেমন, ২০২০ সালের ১৭ অগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালের নানা সময়ে বিরিয়ানির বিল বাকি রয়েছে ৩ লক্ষ ২০ হাজার ৬৮০ টাকা। হাসপাতালের সবুজায়ন করতে বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ টাকা। কিন্তু, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ভুয়ো নথি জমা করে তিনটে বিলে ২ লক্ষ ১৮ হাজার টাকার দাবি করেছেন। বর্তমানে নথিতে উল্লিখিত গাছ বাগানে নেই বললেই চলে। আগাছায় ভরে গিয়েছে মাঠ। হাসপাতাল লাগোয়া একটি ফার্মেসি থেকে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের তিনটি সোফা সেট, টেবিল কেনা হয়েছে, এমন বিলও রয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সবুজায়নের জন্য বৃক্ষরোপণ, আসবাবপত্র, ওষুধ ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রের বহু বিলের কোনও সারবত্তা নেই। সব মিলিয়ে প্রায় পৌনে এক কোটি টাকার ভুয়ো এবং অসঙ্গতিপূর্ণ ৮১টি বিল চিহ্নিত করেছে রোগীকল্যাণ সমিতি। ওই ঠিকাদারকে বিষয়টি নিয়ে শো-কজও করা হয়। বিভাগীয় তদন্তের পরে বর্তমানে পুরো বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। এর মধ্যে বেশ কয়েক জন সুপার দায়িত্ব সামলে বদলি হয়ে গিয়েছেন। বর্তমান সুপার মাস চারেক আগে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
হাসপাতাল সুপার শেখ সৌভিক আলম বলেন, ‘‘প্রায় পৌনে এক কোটি টাকার অসঙ্গতিপূর্ণ বিল মিটিয়ে দেওয়ার জন্য কিংশুক মণ্ডল নামে ওই ঠিকাদার আমাকে চাপ দিচ্ছিলেন। বিষয়টি বিচারাধীন বলে আমি কোনও সদুত্তর দিইনি। তাই আক্রোশবশত আমাকে কখনও ফোনে, কখনও সমাজ মাধ্যমে মেসেজ করে শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে আমি ওই ঠিকাদারের নামে এফআইআর করার আবেদন জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি।’’ রোগীকল্যাণ সমিতির অন্যতম সদস্য কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘ভুয়ো নথি দিয়ে কোটি টাকার বিল তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে ওই ঠিকাদার। সুপারকে হুমকি দিচ্ছে। সুপারের কোনও ক্ষতি হলে তা মেনে নেওয়া হবে না। প্রশাসনকে এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।’’
যদিও অভিযুক্ত ঠিকাদারের দাবি, ‘‘সুপার নিজেই দুর্নীতিগ্রস্ত। আমার বকেয়া বিল না মেটানোর উদ্দেশে এই সব মিথ্যা রটাচ্ছেন তিনি। ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন।’’ পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে।