নজরে বর্ধমান

ঠিকানার খোঁজেই হাতিরা দুর্গাপুরে

ঢালু পিচ রাস্তাটা সটান গিয়ে ধাক্কা খেয়েছে কারখানার লোহার ফটকে। গেটের মুখে লম্বাটে বাতিস্তম্ভ, আপাতত নতমুখ। কারখানার দারোয়ান দেখান— ‘‘রাতে এখানেই গা ঘষছিল হাতিটা। দু’বার ঠেলা দিতেই পাটকাঠির মতো বেঁকে গেল লাইটপোস্ট!’’ তাঁর চোখে ঘোর বিস্ময়।

Advertisement

সুব্রত সীট ও নীলোৎপল রায়চৌধুরী

দুর্গাপুর ও অন্ডাল শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৪
Share:

দুর্গাপুরের জঙ্গলে হাতি। ফাইল চিত্র।

ঢালু পিচ রাস্তাটা সটান গিয়ে ধাক্কা খেয়েছে কারখানার লোহার ফটকে। গেটের মুখে লম্বাটে বাতিস্তম্ভ, আপাতত নতমুখ।

Advertisement

কারখানার দারোয়ান দেখান— ‘‘রাতে এখানেই গা ঘষছিল হাতিটা। দু’বার ঠেলা দিতেই পাটকাঠির মতো বেঁকে গেল লাইটপোস্ট!’’ তাঁর চোখে ঘোর বিস্ময়।

শেষ বাসের অপেক্ষায় সিটি সেন্টারের গুমটির দোকানগুলো জেগে থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। চায়ের দোকানের ছেলেটি চোখ বড় বড় করে বলে, ‘‘কুকুরগুলো চেঁচাচ্ছে দেখে দোকান থেকে মুখ বাড়িয়ে দেখি, একটা হাতি! সেই যে দোকান বন্ধ করেছি... শহরময় হাতি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, আর দোকান খোলে।’’

Advertisement

দুর্গাপুর জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এখন এমনই হস্তী-আলাপ। কেউ তাকে দেখেছেন রাতবিরেতে, কেউ বা ভরদুপুরে। গত হপ্তাখানেক ধরে অনিচ্ছা নিয়ে হাতির সঙ্গে ঘর করেছে শিল্প-শহর। দামোদর পেরিয়ে বাঁকুড়ার বন থেকে দলছুট হাতির আনাগোনা দেড়-দশক জুড়ে কম দেখেনি দুর্গাপুর। কিন্তু বছর দুয়েক ধরে অন্ডাল থেকে পানাগড়, পায়ে-পায়ে হস্তিপথের পরিধি যেন ক্রমেই বাড়ছে। এ শীতে একেবারে সিটি সেন্টারের ঝলমলে চত্বরে ঝলসে উঠেছে হাতির শুঁড়।

বাড়ি ফিরতে রাত হলে, জানলায় তাই উদ্বিগ্ন মুখ। দোকানপাটের ঝাঁপও পড়ছে সাঁঝ ফুরোতেই। বিধাননগরের শ্যামল সূত্রধর যেমন বলছেন, ‘‘সিটি সেন্টার থেকে রাতে এবিএল জঙ্গলের পাশের রাস্তা ধরে বাড়ি ফিরতাম। এখন ঘুরপথে যাতায়াত করছি। কী করব বলুন!’’ কিন্তু পথ ভোলা হাতিরা দুর্গাপুরকেই বেছে নিচ্ছে কেন?

মুখ্য বনাধিকারিক (দক্ষিণ-পূর্ব) কল্যাণ দাস জানাচ্ছেন, দলমার হস্তিযূথের সঙ্গে প্রতি বছরই বেশ কয়েকটি উঠতি বয়সের বেয়াদপ হাতি বাঁকুড়া-পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলে নেমে আসে। বনের পরিভাষায় তারা ‘মালজুরিয়ান’। তিন থেকে পাঁচটি হাতির এমনই কয়েকটি আলাদা দল গড়ে যত্রতত্র দাপিয়ে বেড়ায়। দুর্গাপুর দাপিয়ে বেড়ানো হাতিগুলি সম্ভবত সেই গোত্রের। কল্যাণবাবু বলছেন, ‘‘মালজুরিয়ান হাতিদের স্বভাবচরিত্র একটু উগ্র হয়। দলে ঠাঁই না হওয়ায় তারা নির্দিষ্ট করিডরের বাইরেও পা বাড়াতে কসুর করে না। এ ক্ষেত্রেও তেমনই হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’’

তবে হস্তি বিশেষজ্ঞ এন কমলনাথন বলছেন, ‘‘হাতিরা সব সময় তাদের চলাচলের ক্ষেত্রের পরিধি বাড়াতে চায়। দলমা থেকে বাঁকুড়া ও মাস তিনেক রাঢ়বঙ্গে কাটিয়ে ফিরে যাওয়া— এই পরিভ্রমণ পথের পরিসর বা়ড়াতে চাইছে তারা।’’ দুর্গাপুরের বনাধিকারিক মিলন মণ্ডলেপও মত, ‘‘হাতি সব সময় বিচরণক্ষেত্র বাড়ানোর চেষ্টা করে। আগে মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার জঙ্গলেই ঘোরাফেরা সীমাবদ্ধ ছিল তাদের। বছর কয়েক ধরে তারা শিল্পাঞ্চলে ঢুকতে শুরু করেছে।’’

বাঁকুড়া থেকে দামোদরের চরে দিন কয়েক দাপাদাপির পরে হাতিরা অন্ডালের শ্রীরামপুর চর বা রানিগঞ্জের মেজিয়া ঘাটে পৌঁছে যাচ্ছে। কখনও ঢুকে পড়ছে কাঁকসার বনে। হুলা-পার্টির তাড়া খেয়ে তাদের কয়েকটি আবার কখনও ছিটকে যাচ্ছে আউশগ্রামে, কখনও হচ্ছে বীরভূমমুখী।

এ বার দুর্গাপুরে পা বাড়ানো হাতিগুলি সেই তালিকায় শেষ সংযোজন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement