বন্ধ হিন্দুস্তান কেবল্স কারখানার সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ এলাকাবাসীর। বুধবার। ছবি: পাপন চৌধুরী
উচ্ছেদ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের দাবিতে বুধবার থেকে টানা বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু করল রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেবল্স পুনর্বাসন কমিটি। সকালে কারখানার গেটে কয়েকশো বাসিন্দা বিক্ষোভ দেখান। পরে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধিদল বন্ধ কারখানাটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দেয়।
হিন্দুস্তান কেবল্স সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ভারী শিল্প মন্ত্রক কারখানার জমি ও আবাসনের অবৈধ দখলদারি উচ্ছেদের বিজ্ঞপ্তি দেয়। উচ্ছেদ-অভিযানের সময়ে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের সাহায্যও চাওয়া হয়েছে। বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই পুনর্বাসনের দাবিতে বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু করেন একদল বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ কারখানার প্রাক্তন কর্মী। কেউ বা স্থানীয় বাজারের ব্যাবসায়ী।
বিক্ষোভকারীরা জানান, প্রায় পাঁচ দশক ধরে তাঁরা এই এলাকায় বাস করছেন। বিক্ষোভকারীদের তরফে সুভাষ মহাজন বলেন, ‘‘কারখানা বন্ধ হলেও বাজার চালু আছে। তাই দোকান উচ্ছেদ চলবে না। আবাসন থেকে উচ্ছেদের পরিবর্তে শ্রমিকদের সেগুলিতে বসবাসের জন্য লিজ় দিতে হবে।’’ এই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘কারখানা বন্ধ হলেও মানুষ রয়েছেন এখানে। তাই শহরের অস্তিত্ব টিকে রয়েছে।’’
বন্ধ কারখানাটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন সংস্থার প্রাক্তন আধিকারিক স্বরূপ চক্রবর্তী। এ দিন তাঁর কাছেই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে চাননি। কারখানার সিকিওরিটি ইনচার্জ ঊমেশ ঝা বলেন, ‘‘সবটাই ঊর্ধ্বতন
কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত।’’
তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিকের দাবি, ২০১৭-য় কারখানা বন্ধের পরে কেবল্সের কোনও শ্রমিক আবাসনে থাকেন না। যাঁরা আছেন তাঁরা সকলেই বহিরাগত। ওই আধিকারিকের অভিযোগ, এঁদের অবৈধ ভাবে আবাসনে ঢুকিয়ে মোটা টাকা রোজগার করছে একদল দুষ্কতী। অভিযোগ, কেবল্সের ফাঁকা জমি দখল করে দোকান তুলে বহিরাগতদের বিক্রিও করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে।
তাই আবাসনগুলি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারী শিল্প মন্ত্রক। ওই আধিকারিকের দাবি, একটি বেসরকারি সংস্থাকে এই কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে। কারখানার মোট ৯৫১ একর জমি পুরোপুরি দখলমুক্ত করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে কারখানার জমিতে গড়ে ওঠা সাতটি বাজারের ৩৫১টি দোকানও। তবে কেবল্স নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘কারখানা থেকে ৯৯ বছরের লিজ় নিয়ে বাজার এলাকায় দোকান করা হয়েছে। প্রত্যেকের কাছে সেই চুক্তিপত্র আছে। দোকানগুলি নিজেদের টাকায় বানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাই আমরা কেউ দখলদার নই।’’
তবে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, উচ্ছেদ অভিযান চলাকালীন কত সংখ্যক পুলিশকর্মী প্রয়োজন, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে।