—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
রোগীদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে মাঝেমধ্যেই বেশি ভাড়া দাবি করার অভিযোগ ওঠে অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের একাংশের বিরুদ্ধে। সেই প্রেক্ষিতে এ বার গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে রোগীদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া বেঁধে দিলেন গুসকরা পুর-কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দার ব্রেন স্ট্রোক হয়। তাঁকে গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনেন পরিজনেরা। রোগীকে বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করেন চিকিৎসকেরা। রোগীর আত্মীয়দের দাবি, কোনও অ্যাম্বুল্যান্স চালকই প্রথমে তাঁকে বর্ধমান নিয়ে যেতে রাজি হননি। পরে এক জন রাজি হন। তবে গুসকরা থেকে বর্ধমান যাওয়ার জন্য তিনি ১,৮০০ টাকা ভাড়া দাবি করেন। রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় তাঁর আত্মীয়েরা তখন দরাদরি করার অবস্থায় ছিলেন না। চালকের দাবি মেনে ১৮০০ টাকা দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে রোগীকে বর্ধমান নিয়ে যান তাঁরা।
যদিও হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার দেবজ্যোতি ঘোষের দাবি, “অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ আমার কাছে কেউ করেননি।”
স্থানীয়দের একাংশের দাবি, গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আসা অনেক রোগীই পরিবারকেই এই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে। রোগীদের কথা ভেবেই কেউ ভাড়া নিয়ে দরকষাকষি করেন না। স্থানীয়দের একাংশ এ নিয়ে ক্ষুব্ধ। রোগীদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে বাড়তি ভাড়া চাওয়া এক ধরনের ‘তোলাবাজি’ বলে মনে করেন তাঁরা। ওই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বর্ধমান হাসপাতাল বা অন্যত্র স্থানান্তর হওয়া রোগীর আত্মীয়দের একাংশের অভিযোগ, রোগীর অবস্থা খারাপ হলে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মূলত বর্ধমান হাসপাতালেই রেফার করা হয়। তখন রোগীর পরিজনেরা উদ্বেগের মধ্যে থাকেন। সেই অবস্থার সুযোগ নেন অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের একাংশ।
শুধু তা-ই নয়, রাতে গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে অ্যাম্বুল্যান্স সবসময় মেলে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। এমনকি, অক্সিজেনের জন্য বাড়তি অর্থ দেওয়া হলেও অনেক সময় তা ঠিক মতো মেলে না। এতে রোগীর পরিস্থিতির অবনতি হয়।
বারবার একই অভিযোগ ওঠায় সক্রিয় হয়েছে পুরসভা। গুসকরার পুরপ্রধান তথা গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান কুশল মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া নির্দিষ্ট হারে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে এই অভিযোগ আসছিল। তাই অ্যাম্বুল্যান্স চালক এবং তাঁদের সংগঠনের নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানেই ভাড়া নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়।
পাশাপাশি, রোগীরা দিনরাত যাতে ঠিকমতো অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা পান, তার জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” পুরপ্রধান জানান, ভাড়ার তালিকা বিভিন্ন জায়গাতে টাঙানো হয়েছে। কেউ বেশি ভাড়া নিলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র জেলা সম্পাদক তুষারকান্তি চক্রবর্তী বলেন, “আগেও এক বার এই সিদ্ধান্ত (অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া বেঁধে দেওয়া) নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা মানছিলেন না অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের একাংশ।”