বর্ধমান মেডিক্যালে আহতদের সঙ্গে দেখা করলেন রাজ্যপাল। —নিজস্ব চিত্র।
সন্ধ্যায় বর্ধমান স্টেশনের ঘটনাস্থল ও আহতদের দেখতে হাসপাতালে গেলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। মৃত মফিজা খাতুনের মেয়ের চিকিৎসা ও ভবিষ্যতের জন্য মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে রাজভবনের তরফ থেকে সাহায্য করা হবে বলে জানান তিনি। তার আগে রাজ্য সরকারের তরফেও মন্ত্রী, জেলাশাসক গিয়ে মৃতদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে সাহায্য করেন।
এ দিনই পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয় বর্ধমান স্টেশনের শতাধিক বছর পুরনো জলের ট্যাঙ্ক। বুধবার রাতেই পূর্ব রেলের জিএম ঘটনস্থলে গিয়ে ট্যাঙ্কটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। এ দিন সকাল থেকে বর্ধমান স্টেশনের ২ ও তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝের ওই এলাকা সবুজ কাপড়, জাল দিয়ে মুড়ে ভাঙার কাজ শুরু হয়। ওই দু’টি প্ল্যাটফর্ম দিয়ে কোনও এক্সপ্রেস ট্রেন চালানো হয়নি এ দিন। লোকাল ট্রেনও চালানো হয় ধীরে। ঘটনাস্থলের কাছে কোনও যাত্রীকে যেতে দেওয়া হয়নি। ভেঙে যাওয়া ছাউনিটিও কাটার কাজ শুরু হয় এ দিন।
দুর্ঘটনার পর থেকেই হাসপাতালে ভর্তি আহতদের জল এবং খাবারের ব্যবস্থা করছে রেল। হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পেও রেলের আধিকারিকেরা ছিলেন। রোগীদের পরিজনেদের অভিযোগ শোনেন তাঁরা। হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষ জানান, যাঁরা ভর্তি রয়েছে তাঁরা মূলত শল্য এবং অস্থি বিভাগে ভর্তি রয়েছেন। বুধবার রাতে কয়েক জনকে ছুটি দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকালেও কয়েক জন ছুটি পেয়েছেন। কয়েকজনকে রেফার করা হয়েছে। সকলেই প্রায় সঙ্কটমুক্ত। ঘটনার পর থেকেই আহত এবং নিহতের খোঁজখবর করতে বহু মানুষ হাসপাতালে ভিড় করছেন। তাদের জন্য হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের সামনে একটি অনুসন্ধান কেন্দ্র খোলা হয়েছে। হাসপাতালের একজন ডেপুটি সুপারের ফোন নাম্বারও (৯৮৩২২৫৮৮৯৪) দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বর্ধমান মেডিক্যালে যান। তার আগেই মেডিক্যালে গিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলাশাসক পূর্ণেন্দু কুমার মাঝি, পুলিশ সুপার আমনদীপেরা টাকা তুলে দেন আহত হাতে। রাজ্যপালের আসা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘‘কে আসবেন, কী করবেন আমরা জানি না। আমরা আমাদের কাজ করছি।’’ রাজ্যপাল ঢুকেই আহতদের কাছে চলে যান। রোগীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যার কথা জানতে চান। তিনি বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এখন আহতদের দ্রুত সাহায্য পৌঁছে দেওয়াই আমাদের কাজ। রাজভবন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে।’’ ভর্তি থাকা মা-হারা শিশুটির বিষয়টি রাজভবন দেখছে বলেও জানান তিনি। প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে সাহায্য ও যোগাযোগ রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি। বার বার রেলের দুর্ঘটনা নিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘দুর্ঘটনার কোনও কারণ হয় না। এর পিছনে নানা কারণ থাকে। কোনও না কোনও ঘাটতিও থাকে।’’ সেখান থেকে বর্ধমান স্টেশনে যান তিনি। কয়েক মিনিট ঘুরে দেখেন। সেখান থেকে সার্কিট হাউসে যান। রাতে সেখানেই থেকে শুক্রবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা তাঁর।
এ দিন স্টেশনে দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, একজনকে চাকরির দাবিতে স্মারকলিপি দেয় সিটু। জেলা সিটু সভাপতি নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে বর্ধমান স্টেশনের সামনে বিক্ষোভ দেখান সদস্যেরা। এসইউসিআইয়ের তরফে আবার বর্ধমান স্টেশন ম্যানেজারকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। তাঁদের দাবি, অমৃত প্রকল্পের তালিকায় থাকা বর্ধমান স্টেশনের ১৩৩ বছরে পুরনো জল ট্যাঙ্ক ভাঙার দায় রেল কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। মৃত ও আহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণেরও দাবি করেন তাঁরা। সংগঠনের জেলা সম্পাদক তসবিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘বর্ধমান স্টেশনে গাড়ি বারান্দা ভেঙে পড়া, ওভারব্রিজে যাত্রীদের পদপিষ্ট হওয়া, তারপরে ট্যাঙ্ক ভাঙা যাত্রী নিরাপত্তার গাফিলতি প্রমাণ করছে।’’