Gobindobhog rice

করোনা আবহেও গোবিন্দভোগের বাজার ভাল, দাবি

আর পাঁচটা ধানের মতো কখন দাম বাড়বে, সে আশায় বসে থাকতে হয় না চাষিদের। উৎপাদনের খরচের প্রায় চার গুণ দাম মেলে, দাবি চাষিদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:৩৮
Share:

দক্ষিণ ভারত তো বটেই, মধ্যপ্রাচ্যেও গোবিন্দভোগ চালের চাহিদা রয়েছে। জার্মানি, কানাডা ও ইংল্যান্ডে বাসমতীর জায়গা দখল নেওয়ারও চেষ্টা চলছে। শুধু পূর্ব বর্ধমানের রায়নার ২২টি চালকল থেকে উৎপাদিত চাল সারা বছরে দু’হাজার কোটি টাকারও বেশি বিক্রি হয়, দাবি ব্যবসায়ীদের। তাঁরা জানান, করোনা-আবহে ব্যবসা এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছিল। তবে পর্যটন মরসুম ধীরে ধীরে শুরু হওয়ায় ব্যবসার লেখচিত্র ফের ঊর্ধ্বমুখী হবে, মনে করছেন গোবিন্দভোগ চাল উৎপাদকেরা।

Advertisement

‘বর্ধমান গোবিন্দভোগ মিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’ সূত্রে জানা যায়, রায়না, খণ্ডঘোষ ও জামালপুরের একাংশ (দক্ষিণ দামোদর এলাকা বলে পরিচিত) ছাড়িয়ে গোবিন্দভোগের মত সুগন্ধী চাল হুগলির আরামবাগ, গোঘাট, বাঁকুড়ার পাত্রসায়র, ইন্দাসে চাষ হচ্ছে। সব মিলিয়ে কয়েক হাজার একর গোবিন্দভোগ (রাঢ়বঙ্গে যা খাস চাল বলে পরিচিত) ধান আসে রায়নার চালকলগুলিতে। শুধু গোবিন্দভোগ ধান ভাঙানোর জন্য ফি বছর নতুন নতুন চালকল তৈরি হয়। চালকলের কর্তাদের দাবি, মূলত বিরিয়ানির জন্যই দক্ষিণ ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে গোবিন্দভোগ চাল ব্যবহার করা হয়। খরিফ মরসুমে গোবিন্দভোগ ধানের উৎপাদন হয়। করোনা মরসুমেও গোবিন্দভোগ ধান উৎপাদন করেছেন চাষিরা। সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যেই ধান চলে আসবে চালককলগুলিতে।

চাষিদের দাবি, উচ্চ ফলনশীল ধান যেখানে বিঘে পিছু ১৬ বস্তা হয়, গোবিন্দভোগ সেখানে মেলে ১১ বস্তা। পরিমাণে কম হলেও আর পাঁচটা ধানের মতো কখন দাম বাড়বে, সে আশায় বসে থাকতে হয় না চাষিদের। উৎপাদনের খরচের প্রায় চার গুণ দাম মেলে, দাবি চাষিদের। তাঁরা জানান, জমি থেকে ধান মড়াইয়ে তোলা পর্যন্ত বিঘে প্রতি ছয়-সাত হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ, সাধারণ ধানের থেকে প্রতি বিঘেয় প্রায় ১৬ হাজার টাকা বেশি লাভ মেলে।

Advertisement

তবে করোনা আবহে পরিস্থিতি একই রকম থাকবে কি না, কিছুটা চিন্তা ছিল। ওই সংগঠনের সভাপতি শ্যামল রায়ের দাবি, “করোনার প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই। দু’বছর পর্যন্ত খাস ধান রেখে দেওয়া যায়। দক্ষিণ ভারত থেকে মধ্যপ্রাচ্যে এই চালের চাহিদা রয়েছে। সে জন্য খাস ধানের এলাকা বাড়ছে। চালকলের সংখ্যাও বাড়ছে।’’ আর এক ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামের কথায়, “দু’বছর ধরে মাজরা পোকার দাপটে গোবিন্দভোগের উৎপাদন অন্তত ২৫ শতাংশ কম হয়েছে। কিন্তু চাহিদা রয়েছে। ফলে ব্যবসায় প্রভাব পড়বে না বলেই মনে হয়।’’

সংগঠনের কর্তাদের দাবি, বছরে দু’হাজার কোটি টাকার ব্যবসার মূলত হয় দক্ষিণ ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যে। এ বঙ্গে বড়জোর ১০০-১৫০ কোটি টাকার গোবিন্দভোগ চাল বিক্রি হয়। কারণ, গোবিন্দভোগ চাল মূলত এ বঙ্গে ভোগ আর পায়েস রান্নায় ব্যবহার করা হয়। সেখানে দক্ষিণ ভারত আর মধ্যপ্রাচ্যে বিয়ে বাড়ি, রেস্তোরাঁ, হোটেলে বিরিয়ানির জন্য গোবিন্দভোগ চাল ব্যবহার হয়। শ্যামলবাবুর দাবি, “এখনও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। তবে ধীরে ধীরে হোটেল, রেস্তোরাঁগুলি খুলছে। বিয়ে-অনুষ্ঠানও শুরু হয়েছে। সে জন্য চাল রফতানিও ৫০ শতাংশের মতো হয়েছে। এ রকম চললে, ব্যবসা বেড়ে ৭০ শতাংশের কাছাকাছি হবে। করোনার জন্যে ৩০ শতাংশ ব্যবসা মার খাবে বলে মনে হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement