Debt Trap in Burdwan

সুদের কারবারের চক্রে অসহায় শিক্ষক, না দিলে খুন করার হুমকি, পুলিশে অভিযোগ, ধৃত চার

বিপুল পরিমাণ টাকা শোধ দিতে না পারায় রবিবার কাটোয়া থানায় সুদের কারবারিদের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে টাকা চাওয়ার হুমকির অভিযোগ দায়ের করেন পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া শহরের এক বাসিন্দা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২২ ১০:৫৩
Share:

বিপুল পরিমাণ টাকা শোধ দিতে না পারায় কাটোয়া থানার দ্বারস্থ হন কাটোয়া শহরের উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। প্রতীকী ছবি।

বাবা গুরুতর অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। তাই পরিচিত এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ঋণের ‘আসল’ শোধ করে দেওয়ার পরেও সুদের কারবারিরা তাঁর সুদের পরিমাণ বাড়াতে থাকেন। এমনকি, টাকা না দিলে পরিবারের সকলকে খুনের হুমকিও দেওয়া হয়।

Advertisement

অগত্যা রবিবার থানায় ওই সুদের কারবারিদের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে টাকা চেয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া শহরের বাসিন্দা অনিমেষ সরকার। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে নেমে পুলিশ শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের নাম পীযূষকান্তি দে,সন্দীপ কোনার, চঞ্চলকুমার দে এবং মৃণালকান্তি দে। কাটোয়ার এসডিপিও কৌশিক বসাক বলেন, মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল।

পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১৯ সালে বুড়ো প্রামাণিক নামে এক ব্যক্তির কাছে ৫ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন পেশায় উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক অনিমেষ। তিন বছর পরে ঋণের সেই ৫ লক্ষ টাকা চড়া সুদের চক্রে পড়ে এখন দএ লক্ষ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এত টাকার সুদ শোধ করতে তাঁকে অন্য এক ব্যক্তির কাছ থেকেও চড়া সুদে ঋণ নিতে হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশের অনুমান, কাটোয়া শহর-সহ পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকায় এই ধরনের চড়া সুদে ঋণ দেওয়ার একটি চক্র কাজ করছে। তিন বছর ধরে সেই ধরনেরই একটি চক্রে ফেঁসে গিয়েছিলেন অনিমেষ।

Advertisement

ওই চক্রের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার কোনও উপায় না দেখে কাটোয়া থানার দ্বারস্থ হন তিনি। পুরো ঘটনা বিস্তারিত ভাবে চিঠিতে লিখে পুলিশকেও জানান তিনি।

পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, এটি একটি বড় চক্র। এই চক্রের কারবারিরা অসহায় মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর নামে টাকা ধার দিয়ে চড়া সুদ দিতে বাধ্য করেন। পরবর্তী কালে আসল টাকার সঙ্গে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদের পরিমাণ বাড়াতে থাকেন। দু’তিন বছরের মধ্যে আসল-সুদ মিলিয়ে বিশাল অঙ্কের টাকা ঋণগ্রহীতারা শোধ করতে না পারলে তাঁদের সম্পত্তি জোর করে নিজেদের নামে লিখিয়ে দেন। এমনকি, খুনের হুমকিও দেন।

প্রসঙ্গত, গত মাসেই সুদের কারবারিদের টাকা দিতে না পারায় এক সরকারি কর্মীকে তুলে নিয়ে গিয়ে রেললাইনে বেঁধে রাখা হয়েছিল। রেলের ঘটনায় একটি পা কাটা যায় ওই সরকারি কর্মীর। পুলিশ সূত্রের খবর, এই সুদের কারবারিদের নিযুক্ত ‘মাসলম্যান’-দের হাতে হেনস্থা এবং নিগ্রহের ভয়ে আত্মহত্যা করেছেন বহু ঋণগ্রহীতা। জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডুকে ওই চক্রের বিষয়ে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তাঁর জবাব, ‘‘আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুলিশকে বলেছি, অপরাধীদের গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে।’’

তবে প্রশাসন যা-ই বলুক, এলাকার মানুষ জানেন, সুদের কারবারিদের রমরমা ব্যবসা বহু দিন ধরেই চলছে। সরকারি কর্মচারীকে পা বেঁধে রেললাইনে ফেলে রাখার ঘটনার পরেও অবস্থার বিশেষ কোনও পরিবর্তন হয়নি। এখন দেখার, অনিমেষের ঘটনায় তদন্তে নেমে পুলিশ ৪ জনকে গ্রেফতার করার পর পরিস্থিতির কোনও বদল হয় কি না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement