স্কুল লাগোয়া জায়গায় চলছে পঠনপাঠন। নিজস্ব চিত্র
করোনা-পরিস্থিতিতে বন্ধ স্কুল। তার জেরে গ্রামীণ এলাকায় বহু ছাত্রছাত্রী পঠনপাঠনের বাইরে থাকছেন বলে অভিযোগ উঠছে। স্কুলছুটও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। এলাকার ছেলেমেয়েরা যাতে পড়াশোনার মধ্যে থাকেন, সে জন্য পূর্বস্থলী ১ ব্লকের মিনাপুরে নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য-বিধি মেনে নিখরচায় পড়াচ্ছেন স্কুলেরই এক দল প্রাক্তনী। স্কুল লাগোয়া গাছতলায় চলছে ‘বেড়া ভাঙা পাঠশালা’।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তরুণ-তরুণীরা কেউ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ কলেজের পাঠ শেষ করে চাকরির খোঁজ করছেন। এর পাশাপাশি, এলাকায় স্কুলছুট রুখতে তাঁরা একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। ওই স্কুল সূত্রে জানা যায়, সেখানে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শ’তিনেক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় মিনাপুর ও যশপুর গ্রামে স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। বহু ছাত্রছাত্রী পঠনপাঠনের বাইরে থাকার জেরে অবসাদেও ভুগতে পারে বলে মনে করেন ওই সংগঠনের সদস্যেরা। সে কারণে তাঁরা চালু করেন গাছতলায় পড়ানো। খোলা আকাশের নীচে মাস ছয়েক ধরে এই উদ্যোগ চলছে। প্রাক্তনীদের ওই সংগঠনের দাবি, স্কুলে স্বাভাবিক পঠনপাঠন চালু না হওয়া পর্যন্ত তাদের ৩৬ জন সদস্য এই কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
ওই প্রাক্তনীরা জানান, স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীদের অবিভাবকদের ফোন নম্বর জোগাড় করা হয়েছে। সেই নম্বর ধরে ফোন করে অভিভাবকদের প্রথমে তাঁদের উদ্যোগের কথা জানানো হচ্ছে। তাঁরা রাজি হলে ছেলেমেয়েকে ‘বেড়া ভাঙা পাঠশালা’য় পাঠাতে বলা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত এক-একটি শ্রেণির গড়ে জনা ২৫ করে পড়ুয়া শামিল হয়েছে। এক-এক দিন এক-একটি শ্রেণির নানা বিষয়ের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। ছুটির দিন বাদে, সকাল-বিকেলে পড়াশোনা চলছে গাছতলায়। এ ছাড়া, কচিকাঁচাদের নিয়ে কবিতা, ছড়া, গানের আসরও বসছে।
সংগঠনের তরফে জুলফিকার আলি মণ্ডল, সুধাকর ঘোষ, সোনালি খাতুনেরা জানান, যাঁরা ছেলেমেয়েদের পাঠাচ্ছেন, তাঁদের পড়ানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মাস্ক পরিয়ে এবং দূরত্ব-বিধি মেনে বসানো হচ্ছে পড়ুয়াদের। এমন উদ্যোগে খুশি অনেক অভিভাবকও। সিরাজুল খান, মইনুল হক মণ্ডলদের কথায়, ‘‘দীর্ঘদিন স্কুল না খোলায় বাড়িতে ছেলেমেয়েরা একাকিত্বে ভুগছিল। পাঠশালায় গিয়ে তারা ভাল থাকছে।’’
মিনাপুর নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ সরকার বলেন, ‘‘স্কুল বন্ধ থাকায় ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্কুলের প্রাক্তনীদের কাছে কিছু কর্মসূচি নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। ওঁরা এই পাঠশালা চালু করেছেন। তাতে স্কুল বন্ধ থাকলেও কোনও ছাত্রছাত্রী স্কুলছুট থাকছে না।’’
পূর্বস্থলী চক্রের স্কুল পরিদর্শক কৃষ্ণকান্ত কীর্তনিয়ার বক্তব্য, ‘‘ওঁরা কী করছেন, সে বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’ পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক বলেন, ‘‘করোনা সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, সে জন্য স্কুলগুলি বন্ধ রাখা হয়েছে। কোনও সংগঠনের তরফে কোনও উদ্যোগ হলে, খেয়াল রাখতে হবে যাতে করোনা সংক্রমণ না ছড়িয়ে পড়ে।’’