নেতাকে স্মরণ। প্রয়াত হরমোহন (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র
প্রয়াত হলেন কাটোয়ার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা সমাজকর্মী শতায়ু হরমোহন সিংহ। কয়েক মাস ধরেই তিনি বয়সজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন। শনিবার গভীর রাতে কাটোয়ার খাজুরডিহি গ্রামে নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান ‘আনন্দ নিকেতনে’ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনেই এমন খবরে শোকের ছায়া নামে এলাকায়। রবিবার সকাল থেকে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় জমান বহু শুভানুধ্যায়ী। দুপুরে কাটোয়া মহাশ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। তাঁর দুই ছেলে রয়েছেন।
১৯২৩ সালে কাটোয়ার সুদপুর গ্রামে জন্ম হরমোহনের। ১৯৪৯ সালে কলকাতা মেডিক্যাল স্কুল (বর্তমানে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ) থেকে পাশ করেন। কাটোয়া কেন্দ্র থেকে ১৯৭১, ১৯৭৭ ও ১৯৮২ সালে বিধায়ক নির্বাচিত হন হরমোহন। প্রতি বছরের বন্যা থেকে রেহাই দিতে কাটোয়া শহরের উত্তর-পূর্ব ধার বরাবর অজয় ও ভাগীরথীতে বাঁধ নির্মাণ, শহরের দক্ষিণ প্রান্তে শহরের মানুষের জন্য আবাসন তৈরি, কাটোয়া কলেজ, স্টেডিয়াম, দমকল কেন্দ্র, বাসস্ট্যান্ড, পুরসভার অতিথি নিবাস, সংহতি সভাগৃহ, টেলিফোন অফিস, নিয়ন্ত্রিত বাজার-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কার্যালয় মাথা তুলেছে তাঁর হাত ধরেই। বইমেলা, খেলাধুলো, গ্রন্থাগার তৈরি, সমাজসেবার নানা কাজের নেতৃত্বে থাকতেন তিনিই। শুভানুধ্যায়ীরা তাঁকে ‘কাটোয়ার রূপকার’ বলে পরিচয় দেন।
সমাজকর্মে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিন বার রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান হরমোহন। ১৯৯০ সালে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কৃত হন কাটোয়ার তৎকালীন বিধায়ক। আর দলে ফেরার চেষ্টা করেননি। তবে আরও বড় পরিসরে কাজের তাগিদে কাটোয়া-করুই রাজ্য সড়ক লাগোয়া খাজুরডিহি পঞ্চায়েত এলাকায় ৫০ একর জায়গায় গড়ে তোলেন অনাথ, প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র ‘আনন্দ নিকেতন’। সেই সঙ্গে বৃদ্ধাবাস, বিশেষ ভাবে সক্ষমদের পুনর্বাসন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও। রাজ্য সরকারের পাঠানো তিনশোর বেশি অনাথ শিশু-কিশোর এখানে থাকে। কিছু দিন আগে শিশু সুরক্ষা কমিশনের তরফে পুরস্কারও পেয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। তার আগেও বহু প্রতিষ্ঠানের তরফে স্বীকৃতি পেয়েছেন ব্যক্তি হরমোহন ও তাঁর এই প্রতিষ্ঠান।
প্রাক্তন বিধায়কের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন দল নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতারা। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানবদরদি হরমোহনবাবু ছিলেন প্রকৃত কর্মযোগী। উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান কাটোয়ার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা রইল।’’ জেলা (কাটোয়া সাংগঠনিক) বিজেপি সভাপতি গোপাল চট্টোপাধ্যায়, কাটোয়া মহকুমা কংগ্রেসের সভাপতি জগদীশ দত্তেরা বলেন, ‘‘রাজনীতির আঙিনা ছেড়েও কী ভাবে সমাজসেবা করা যায়, তা দেখিয়েছেন হরমোহনবাবু। তাঁর মৃত্যুতে শূন্যতা তৈরি হল।’’ কাটোয়ার সিপিএম নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হরমোহনবাবু ছিলেন উন্নয়নের আর এক নাম। তাঁর নেতৃত্বেই এখনকার কাটোয়া মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।’’
প্রয়াত বিধায়কের ছেলে জয়ন্ত সিংহ বলেন, ‘‘বাবা বেশ কয়েক মাস ধরেই বয়সজনিত অসুস্থতায় কাবু হয়ে গিয়েছিলেন। আনন্দ নিকেতনেই শনিবার রাতে প্রয়াত হয়েছেন।’’