সাজাপ্রাপ্ত বিনয়কুমার সাউ।—নিজস্ব চিত্র।
দোকানদারকে এক জন হুমকি দিচ্ছে দেখে প্রতিবাদ করেছিলেন তরুণ। বচসা শুরু হতে আগ্নেয়াস্ত্র বের করে তাঁকেই গুলি করে বসেছিল হুমকি দেওয়া ব্যক্তি। চার বছর আগে পাণ্ডবেশ্বরের সেই ঘটনায় অভিযুক্তের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করল দুর্গাপুর আদালত। বুধবারই আবার আসানসোল আদালত এক নাবালিকাকে খুনের চেষ্টায় এক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি খুনের ঘটনাটি ঘটে। পাণ্ডবেশ্বরের ইরানি পাড়ার বাসিন্দা বছর আঠেরোর নাজির আলি সে দিন রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বাড়ি থেকে সামান্য দুরে একটি পানের দোকানে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর সম্পর্কের এক ভাইপো সেলিম আলিও। মামলার সরকারি আইনজীবী উত্পল চট্টোপাধ্যায় জানান, তখন সেখানে এসে দোকানদারকে হুমকি দেয় স্থানীয় বাসিন্দা বিনয়কুমার সাউ। নাজির তখন বিনয়ের কাছে জানতে চান, কেন সে দোকানদারকে হুমকি দিচ্ছে। এই কথায় খেপে ওঠে বিনয়। দু’জনের মধ্যে বচসা শুরু হয়ে যায়। হঠাত্ই বিনয় কোমর থেকে রিভলবার বের করে নাজিরকে খুব কাছ থেকে গুলি করে।
অচৈতন্য অবস্থায় রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়েন নাজির। ছুটে আসেন আশপাশের বাসিন্দারা। নাজিরকে দুর্গাপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সকেরা মৃত বলে জানান। নাজিরের ভাইপো সেলিম আলি পাণ্ডবেশ্বর থানায় বিনয়ের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেন। পুলিশ বিনয়কে গ্রেফতার করে। আইনজীবী উত্পলবাবু জানান, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ৩০২, ২৫ (এ) এবং ২৭ নম্বর ধারায় মামলা শুরু হয়। গত চার বছর ধরে চলা শুনানিতে ১৫ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
বুধবার দুর্গাপুর আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক প্রসূন ভট্টাচার্যের এজলাসে মামলার সাজা ঘোষণা হয়। আইনজীবী উত্পলবাবু জানান, বিচারক খুনের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। অনাদায়ে আরও ৩ বছরের জেল। অস্ত্র আইনে এক হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক বছরের জেলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অস্ত্র নিয়ে অতিরিক্ত কিছু অপরাধ আইনে ৩ বছরের জেল ও ১ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৬ মাসের জেলের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। নাজির আলির বাবা আলি খান আলি বলেন, “এই সাজায় আমরা খুশি।”
এ দিনই এক নাবালিকাকে খুনের চেষ্টায় এক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আসানসোল আদালত। আজ, বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত দায়রা বিচারক মুকুলকুমার কুণ্ডু মামলার সাজা ঘোষণা করবেন।
আসানসোল আদালতের সরকার পক্ষের প্রধান আইনজীবী স্বরাজ চট্টোপাধ্যায় জানান, সুধীর রাম নামে ওই ব্যক্তি জামুড়িয়ার কুনুস্তরিয়া খনি আবাসন এলাকার বাসিন্দা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে ওই এলাকার এক নাবালিকাকে নিয়মিত উত্ত্যক্ত করত। ২০১৩ সালের ২৫ জুন সকালে ওই নাবালিকা তার এক আত্মীয়ার সঙ্গে এলাকার একটি জঙ্গলে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথে সুধীর তার পথ আটকায় ও ছুরি দিয়ে নাবালিকার শরীরের নানা জায়গায় আঘাত করে। নাবালিকা ও তাঁর আত্মীয়ার চিত্কারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। সুযোগ বুঝে সুধীর পালিয়ে যায়। নাবালিকার পরিবার পুলিশে অভিযোগ করার পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এই মামলায় ১৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে জানান সরকারি আইনজীবী।