Indian Railways

‘পরিবেশটা অচেনা ঠেকছে’, ট্রেনে উঠে বলছেন যাত্রীরা

পূর্বস্থলী, পাটুলি, নবদ্বীপ স্টেশনেও বিশেষ যাত্রী ছিলেন না। কালীনগর, বিষ্ণুপ্রিয়ার মতো হল্ট স্টেশনগুলিতে যাত্রীর সংখ্যা নগণ্য। 

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২০ ০২:৪৪
Share:

যাত্রা শুরু। কালনা থেকে কাটোয়ার পথে। নিজস্ব চিত্র।

ঘড়িতে তখন সকাল ৮টা। কালনা স্টেশনে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকছিলেন এক যুবক। তাঁর দিকে ভেসে এল হাঁক, ‘‘দাঁড়ান, আপনার ‘থার্মাল চেকিং’ বাকি আছে।’’ প্ল্যাটফর্মে ঢুকতেই রেল পুলিশ, আরপিএফ, সিভিক ভলান্টিয়ারদের কড়া নজর। মুখে ‘মাস্ক’ আছে কি না, কোথাও একাধিক জন জড়ো হচ্ছেন কি না, খেয়াল রাখছেন তাঁরা। মাইকে ঘনঘন ঘোষণা, ‘মাস্ক পরে, স্যানিটাইজ়ার নিয়ে ভ্রমণ করুন।’ প্রায় সাড়ে সাত মাস পরে ট্রেন ধরতে গিয়ে বুধবার এমন অভিজ্ঞতা হল যাত্রীদের।

Advertisement

সকাল ৯টায় কালনার ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকল আপ কাটোয়া লোকাল। জনা ষাটেক যাত্রী উঠলেন সেই ট্রেনে। একটি কামরায় উঠে দেখা গেল, বেশ ফাঁকা। দু’টি আসনের মাঝে একটি করে আসনে স্টিকার সাঁটিয়ে সেটিতে বসতে নিষেধের বিজ্ঞপ্তি রয়েছে। দূরত্ব-বিধি রাখতেই এই ব্যবস্থা। তবে কামরায় বেশ লোক না থাকায় এমনিতেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দূরত্ব রেখে বসেছিলেন যাত্রীরা।

কালনা থেকে কাটোয়া পর্যন্ত প্রায় ৫৩ কিলোমিটার পথে পড়ে ১৭টি স্টেশন। করোনা পরিস্থিতির আগে প্রতিটি স্টেশন থেকেই ব্যস্ত সময়ে বহু মানুষ উঠতেন। সমুদ্রগড়ে প্রচুর তাঁতশিল্পী ওঠানামা করতেন। এ দিন কোনও স্টেশনেই লোকজন দেখা যায়নি। পূর্বস্থলী, পাটুলি, নবদ্বীপ স্টেশনেও বিশেষ যাত্রী ছিলেন না। কালীনগর, বিষ্ণুপ্রিয়ার মতো হল্ট স্টেশনগুলিতে যাত্রীর সংখ্যা নগণ্য।

Advertisement

ব্যান্ডেল-কাটোয়া লাইনে রয়েছেন প্রচুর হকার। ভিড় ট্রেনে তাঁরা নানা জিনিস বিক্রি করেন। সকালে ট্রেনে উঠে হকারদের থেকে লুচি, পরোটা, মোহনভোগ কিনে অনেকে জলখাবার সারেন। কিন্তু আপাতত হকারদের ট্রেনে ওঠার অনুমতি না থাকায় এ দিন সে দৃশ্য দেখা যায়নি। আরপিএফের নজর এড়িয়ে ব্যাগের ভিতরে রুমাল, আমলকি, গামছার মতো কিছু পণ্য নিয়ে কোনও কোনও স্টেশন থেকে দু’চার জন হকার উঠলেও, দু’একটি স্টেশন পরেই নেমে গিয়েছেন।

পূর্বস্থলীর চুপি এলাকার বাসিন্দা সেকেন্দার শেখ বলেন, ‘‘প্রায় সাড়ে সাত মাস পরে ট্রেনে উঠলাম। নলকূপের মোটর কিনতে কাটোয়া যাচ্ছি। ট্রেনে ভিড় নেই। এক কাপ চা-ও মিলছে না। পরিবেশটা অচেনা মনে হচ্ছে।’’ ভিড় কম থাকায় যাত্রীদের একাংশ অবশ্য খুশি। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মী, কাটুয়ার চাণ্ডুলির বাসিন্দা লালন হকের কথায়, ‘‘করোনা- পরিস্থিতিতে ট্রেনে চড়া নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। তবে এ ভাবে অল্প যাত্রী নিয়ে ট্রেন চললে সংক্রমণ ছড়ানোর ভয় কম থাকবে।’’ কাটোয়া থেকে ডাউন ট্রেন ছাড়ল ১১টা ১০ মিনিটে। আগে এমন সময়ে ট্রেনে আসন পাওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি, রুমাল-ব্যাগ রাখার দৃশ্য দেখা যেত, এ দিন তা নেই। স্টেশনে পাঁপড় বিক্রি করতে আসা সন্ধ্যা দে-র বক্তব্য, ‘‘ট্রেনে যাত্রী তেমন না থাকায় বিক্রি ভাল হয়নি।’’

রেলের আধিকারিকদের দাবি, সব ট্রেন সময়ে চলছে, এই বার্তা এখনও সমস্ত যাত্রীদের কাছে পৌঁছয়নি। তা ছাড়া স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অনেকেই এখনও প্রতিদিন কর্মস্থলে যাচ্ছেন না। অনেকের মধ্যে করোনা নিয়েও ভীতি রয়েছে। এ সব কারণেই এ দিন কম যাত্রী ছিল বলে মনে করছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement