সাজছেন দেবী, পাশে পবন সিংহ। নিজস্ব চিত্র
পরনে ধবধবে সাদা ধুতি আর খাকি জামা। আর কোমরে ঝোলানো তরোয়াল নিয়ে মন্দির চত্বরে ঘুরছিলেন তিনি। তিনি, অর্থাৎ কালনায় দেবী মহিষমর্দিনী মায়ের পাহারাদার। ফি বছর মায়ের পুজোর সময়ে মন্দিরেই থাকতে হয় পাহারাদারকে। ইতিহাস আর উৎসবের এমন জমজমাট আবহে আজ, সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে চার দিনের পুজো।
এলাকার প্রবীণদের দাবি, লৌকিক ইতিহাসের সূত্রে জানা যায়, এই উৎসবের বয়স দুই শতাব্দী। কারও মতে তারও বেশি। ভিড় জমান বর্ধমান, নদিয়া, হুগলি-সহ রাজ্যের নানা জেলার ভক্তরা। ভিড় সামলাতে ও উৎসবের দিনগুলিকে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানায় প্রশাসন। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, রবিবার থেকেই মোতায়েন করা হয়েছে প্রচুর পুলিশকর্মী। রয়েছে সিসি ক্যামেরা। নজরদারি চলছে নদী পথেও।
এই আবহে ৩৮ বছরের পবন সিংহেরও নাওয়া-খাওয়ার সময় নেই। কারণ তিনিই যে পাহারাদার। উৎসব শুরুর আগের দিন, রবিবার, ষষ্ঠীতে প্রথা মতো তিনি চলে এসেছেন মন্দির চত্বরে। এ দিনই দেবীকে সাজানো হয় নানা গয়নায়। পবনবাবু জানান, সপ্তাহখানেক আগে থেকে নিরামিষ আহার করতে হয় তাঁকে। ষষ্ঠীর দিন, রবিবার মন্দিরে আসার পরে তাঁর হাতে পুজো কমিটি তুলে দিয়েছে খাপবন্দি তলোয়ার। তা কোমরে গুঁজেই চলছে পাহারা। পুজো চলাকালীন, দশমীর রাতে শোভাযাত্রায় সবার আগে, এমনকী ভাগীরথীর ঘাটে দেবীর গায়ের গুছিয়ে রাখা— এই সব পর্বেই পবনবাবু থাকেন মায়ের পাশে পাশে।
কালনা শহরের শ্যামগঞ্জপাড়ার বাসিন্দা পবনবাবুর দাবি, তাঁরা পাঁচ পুরুষ ধরে রক্ষীর কাজ করে আসছেন। যদিও তাঁর বুকের সামনে জ্বলজ্বল করা পিতলের ব্যাজের বাংলা হরফে লেখাটিতে সময়ের উল্লেখ হিসেবে রয়েছে, ‘সন ১৩১৮।’ কেন এমনটা? পবনবাবুর দাবি, ‘‘বংশ পরম্পরায় এই কাজ করছি আমরা। আমিই এই কাজ করছি সাত বছর। হয়তো সেই সময়ে বর্ধমান রাজ পরিবারের তরফে ব্যাজটি বংশের কোনও পুরুষের হাতে তুলে দেওযা হয়।’’
তবে রক্ষীর প্রয়োজনীয়তা হয়েছিল কেন? এলাকার প্রবীণদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেবী প্রচুর গয়না পরিহিতা থাকেন। সে সব ঠিক মতো পাহারা দেওয়ার জন্যই বহু আগে এই ব্যবস্থা করা হয়। এখন অবশ্য পুজো মণ্ডপ ঘিরে আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা থাকে। কিন্তু ঐতিহ্য মেনে এখনও রয়েছেন পবনবাবু। পেশায় ব্যবসায়ী পবনবাবু চান, তাঁদের বাড়ির আগামী প্রজন্মও যেন এই কাজ নিষ্ঠা ভরে করে চলে।