ধাত্রীগ্রামে এসটিকেকে রোড অবরোধ। নিজস্ব চিত্র
কোথাও দোকানপাট খোলা, কোথাও বন্ধ। নানা জায়গায় রেল অবরোধের চেষ্টা। বিক্ষিপ্ত গোলমাল। বৃহস্পতিবার বিরোধী শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে পূর্ব বর্ধমান জেলার ছবিটা ছিল এই রকমই।
মিছিল, গোলমাল
ধর্মঘটের সমর্থনে সিপিএম বর্ধমান শহরে মিছিল করে সকালে। এই মিছিলের পরে, বেশ কিছু দোকানপাটের ঝাঁপ পড়ে যায়। এর পরেই তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন ধর্মঘটের বিরোধিতা করে মিছিল বার করে। তৃণমূল নেতারা বন্ধ দোকানগুলি খুলতে উদ্যোগী হন। একই চিত্র দেখা যায় মেমারিতেও। পালশিটে জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধের চেষ্টা করেন ধর্মঘটের কিছু সমর্থক। দু’টি জায়গাতেই মিনিট ১৫-২০ অবরোধ চলে। পুলিশ তা তুলতে গেলে গোলমাল, ধস্তাধস্তি বেধে যায়। ধর্মঘটকারীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। ভাতারের বলগোনা বাজারে দোকান খোলা নিয়ে অশান্তি বাধে। বাম সমর্থকেরা তৃণমূল অফিসের সামনে জড়ো হলে, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পাটনা গ্রামে এক ধর্মঘট সমর্থককে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। সকালে গুসকরায় ধর্মঘটের সমর্থনে সিপিএম মিছিল বার করে। সকাল ৯টা নাগাদ ডাকবাংলোর কাছে রাস্তা অবরোধ করে তারা। পুলিশ গিয়ে তা তুলে দেয়। বিকেলে তৃণমূলের তরফে ধর্মঘটের বিরুদ্ধে একটি মিছিল করা হয়। ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে জেলায় কোথাও কোনও বড় অশান্তি বাধেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বাসে-ট্রেনে
জেলার নানা প্রান্তেই এ দিন ধর্মঘটের সমর্থনে রেল অবরোধ করা হয়। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তাও অবরোধ হয়। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের সমুদ্রগড় স্টেশনে, ভাতারে রেল অবরোধ হয়। ভাতারের নাসিগ্রাম মোড়ে সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ বর্ধমান-কাটোয়া রোড অবরোধ করা হয়। পারুলিয়া, ধাত্রীগ্রাম বাজারে এসটিকেকে রোডও অবরোধ করেন ধর্মঘটের সমর্থকেরা।
তবে জেলার অনেক বাসস্ট্যান্ড থেকেই এ দিন বাস ছাড়েনি। কালনা বাসস্ট্যান্ড থেকে সকালের দিকে বেসরকারি বাস ছাড়লেও, যাত্রীর অভাবে দুপুরের পর থেকে সুনসান হয়ে যায়। একই চিত্র দেখা যায় কাটোয়াতেও। গুসকরা বাসস্ট্যান্ড থেকেও কোনও বাস চলেনি। বর্ধমান শহরে অবশ্য বাস চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। বাম কর্মীরা কিছু জায়গায় চালকদের কাছে বাস বন্ধের দাবি জানান। পুলিশ সূত্রের দাবি, অন্য দিনের তুলনায় বর্ধমান ও মেমারি শহরে এ দিন বাইরে থেকে ৪০ শতাংশ লোকজন কম এসেছিলেন।
দোকান-বাজার
বর্ধমান শহরের কার্জন গেট চত্বরে বেশ কিছু বড় দোকান এ দিন বন্ধ ছিল। তবে আনাজের বাজারগুলি খোলা ছিল। মেমারি শহরের কৃষ্ণবাজার, সোনাপট্টি, মেমারি ২ ব্লকের সাতগেছিয়া, পাহারহাটি, বোহার এলাকার দোকানপাট সকাল থেকেই বন্ধ ছিল। কালনা শহরেও বেশিরভাগ দোকান বন্ধ ছিল। চকবাজারের পাইকারি ও খুচরো বাজারে সার দিয়ে দোকানের ঝাঁপ নামানো ছিল। তালা ঝুলতে দেখা গিয়েছে মুদিখানা ও কাপড়পট্টিতেও। তবে সরকারি শিবির থেকে আলু কেনার ভিড় দেখা যায়। কাটোয়া ও দাঁইহাটে হাতে গোনা কিছু দোকানপাট খোলা থাকতে দেখা যায়। একই ছবি দেখা গিয়েছে মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম থেকে গলসিতে। গুসকরা বাজারের একাংশ বন্ধ ছিল। মন্তেশ্বরে অবশ্য বাজারহাট খোলাই ছিল। যানবাহন চলাচল করায় জনজীবন স্বাভাবিক ছিল বলে ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি।
অফিস-কাছারি
জেলা প্রশাসনের দাবি, সরকারি অফিসে এ দিন পুরোদমে কাজ হয়েছে। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) এনাউর রহমান জানান, সব কর্মচারীই এ দিন হাজির ছিলেন। তবে নানা জায়গায় ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের দরজা বন্ধ থাকতে দেখা গিয়েছে। কালনা শহরে নানা ব্যাঙ্কে তালা ঝুলতে দেখা যায়। শহরের ১০৮ শিবমন্দির লাগোয়া রেজিস্ট্রি অফিস, কালনা পুরসভার অফিস খোলা ছিল। পুরপ্রধান দেবপ্রাসাদ বাগ এ দিন নানা বৈঠক করেন। কাটোয়ায় অফিস, আদালত খোলা থাকলেও লোকজন বিশেষ ছিল না।
কৃষি-শিল্পে
ধর্মঘটের প্রভাব কৃষিকাজে পড়তে দেখা যায়নি। বড়শুল থেকে পূর্বস্থলী, জেলার নানা প্রান্তেই সকাল থেকে কৃষকেরা মাঠে নেমেছিলেন। ধান কেটে ঘরে তোলা, আলু লাগানোর কাজ চলতে দেখা যায়। বিভিন্ন এলাকায় একশো দিনের কাজও দেখা গিয়েছে। নানা চালকলেও স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। বর্ধমান-কাটোয়া রোডের ধারে বিভিন্ন কল-কারখানা, কাগজকলেও উৎপাদন স্বাভাবিক ছিল বলে সেগুলির কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে।
দাবি-পাল্টা দাবি
সিপিএমের দাবি, ‘অভূতপূর্ব’ ধর্মঘট পালন হয়েছে। দলের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের বক্তব্য, ‘‘বর্ধমান শহরে জিটি রোড, বিসি রোডে দোকান বন্ধ থাকে না। বৃহস্পতিবার কিন্তু বন্ধ ছিল। তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে, জেলায় মানুষ এই ধর্মঘটে সাড়া দিয়েছেন। গণ পরিবহণ, রাজ্য সরকারি কর্মচারীরাও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ধর্মঘটে সাড়া দিয়েছেন। খেতমজুরেরাও কাজে যাননি।’’ বিজেপির জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক (বর্ধমান সদর) সুনীল গুপ্তের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘লকডাউনের পরে, মানুষ ধীরে-ধীরে কাজে ফিরছেন। সেই সময়ে এই ধরনের অযৌক্তিক ধর্মঘট মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছেন।’’ তৃণমূল নেতা তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আমরা দাবিগুলি সমর্থন করলেও যে কোনও রকম ধর্মঘটের বিরোধী। মানুষও ধর্মঘটে সাড়া দেননি।’’